গল্প ও অণুগল্প

গল্পের গোরু গাছে ওঠেঃ একটি নিতান্তই কল্পকাহিনী



স্বপ্না সেন


এই গল্প এক সহজ, সরল মধুর রসের ভাণ্ডার। এখানে মানুষ, পশুপাখি, প্রকৃতি এক সুরে বাঁধা থাকে। তাদের ভাষা এক, চেতনা অভিন্ন এবং পরস্পরের প্রতি মমত্ববোধ অতুলনীয়। এই গল্পের প্রধান চরিত্র এক মানুষ যাকে সবাই 'গল্প' বলে ডাকে। গ্রামের নাম পলাশডাঙা। বসন্তকালে পলাশের জঙ্গল যেন লালরঙের বন্যা বইয়ে দেয়। গরমকালে যেমন গরম, শীতকালে ততটাই ঠাণ্ডা। জলের কষ্ট গরমে খুব। বৃষ্টি এলে শান্তি। গল্প এই তল্লাটের লোক। তার আছে খড়ের চালের ঘর। কিছু জমি। একটা ডোবা। আর তিনটি পোষ্য। দুটো গরু কানু আর ভানু। আর আছে একটা বাঁদরছানা। তাকে গল্প ডাকে গোরু বলে। কারণ বাঁদরছানা গাছে চড়তে ভয় পায়। ভীতু প্রকৃতির। গল্প তার কানু, ভানু আর গোরুর সাথে মন খুলে কথা বলে। গোরুর গাছে চড়তে ইচ্ছে করে কিন্তু ওর মাথা ঘোরে। তাই ভয় পায়। ভীতু বাঁদরকে গল্প তাই নাম দিয়েছে গোরু।

দিন কাটে। গল্প খুব নামী ছুতোর মিস্ত্রি। তার কাজের সুনাম আছে। লোকজনের নানা রকম জিনিসের চাহিদা গল্পকে খুবই ব্যস্ত রাখে। গল্পের বউ গুণময়ী। সে সংসার সামলায়। ফলের বাগান সবজির বাগান করে। খুব ভালো সেলাই করে। তার কাছেও মেয়েদের ভীড় লেগেই থাকে। সন্ধ্যেবেলা যখন সব নিঝুম হয়ে যায় তখন গল্প গুণময়ী, কানু, ভানু আর গোরুকে নিয়ে সারাদিন কি হল তাই আলোচনা করে। গ্রামের লোকেরা তাদের পছন্দ করে। এরা ভালো মানুষ। কোনও ঝামেলায় নেই। হাসিমুখে থাকে।

এইভাবে নিশ্চিন্তে দিন কাটতে থাকে। একদিন সন্ধ্যেবেলা একটু ঝড় উঠেছে। বৃষ্টি হলো অল্প স্বল্প। গাছের ডাল দু'একটা ভেঙে পড়ল। গোরুর মন কেমন করে উঠল। সে বলল তার খুব গাছে চড়তে ইচ্ছে করে। অন্য বাঁদররা তাকে নিয়ে হাসাহাসি করে। গোরু বলে ঠাট্টা করে। ওর মন খারাপ করে। একথা শুনে কানু-ভানুরও খুব দুঃখ হল। তারা গল্পের কাছে জানতে চাইল গোরুর জন্য কী কিছুই করা যায় না? গুণময়ী গল্পকে বলল সে এতো ভালো কাঠের কাজ জানে, সে কী কিছু করতে পারে না?

গল্প সারারাত ভাবল। তারপর সে ধীরে ধীরে কাঠের একটা গাছ তৈরি করতে লাগল। ডালপালা, সবুজ পাতা, কাঠ দিয়ে তৈরি করে রঙ করল। মাঝারি মাপের এই কাঠের গাছ তার ডালপালা পাতা ছড়িয়ে উঠোনে শোভা পেতে লাগল। চারপাশে রংগন, করবী, জবা, জুঁই ফুলের জঙ্গল। তাদের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে গাছটা। কানু-ভানু গাছের নীচে দাঁড়ালো। গোরু তাদের পিঠে উঠল। তারপর নুয়ে পড়া গাছের ডাল ধরে গাছের ওপরে উঠে পরম আনন্দে দোল খেতে লাগল। শখ মিটে গেলে আবার নেমে এলো। গোরুর সাহস আস্তে আস্তে বাড়তে লাগল। এখন কানু-ভানুকে ছাড়াই সে গাছে উঠে দোল খায়। মনে হয় একদিন ও কাঠের গাছ থেকে সত্যিকারের গাছে উঠতে পারবে। গল্প ঠিক করেছে তখন ওর নাম দেবে রূপু।

চিত্রঃ লেখায় ব্যবহৃত ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence) ব্যবহার করে কাল্পনিকভাবে তৈরি।

ভাবনাঃ কমলিকা চট্টোপাধ্যায়