স্থানীয় খবর

  • শান্তিপুর 'পূর্ণিমা মিলনী'র অভিনব উদ্যোগ

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ভারতমাতার অতন্দ্র প্রহরী ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য আয়োজিত হয়েছিল ভারতীয় সৈনিকদের জন্য শতাধিক মানুষের রক্তদান শিবির এবং তাদের ব্যবহৃত অস্ত্র ভান্ডারের প্রদর্শনী।

রক্তদাতাদের মধ্যে যেমন অনেক সাধারণ নাগরিক ছিলেন, তেমনি সেনাবাহিনীর অনেক জোয়ানও ছিলেন। মোট ১৮ রকমের অস্ত্র প্রদর্শিত হয়েছিল। মর্টার থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক অস্ত্র এখানে দেখানো হয়েছিল। প্রদর্শনীতে অগণিত দর্শক উপস্থিত হয়ে অস্ত্রগুলি হাতে নিয়ে পরখ করেন। এই অভিনব উদ্যোগ ও রূপায়ণ চৌধুরীর চিন্তাভাবনাকে প্রত্যেকেই প্রশংসা করেন। কারণ শান্তিপুরে এই উদ্যোগ সর্বপ্রথম। শরৎকুমারী স্কুলের এনসিসি দল প্রথমে মার্চপাস্টের মাধ্যমে সঞ্জয় কুমার (ডিআইজি, বিএসএফ)-কে অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করেন। তারপর সঞ্জয় কুমার প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন। দু'দিন ব্যাপী এই কর্মসূচি চাকফেরা ও বন্ধুসভা হলে অনুষ্ঠিত হয়।

নদিয়া জেলার বুকে অভিনব ও বৈচিত্রপূর্ণ অনুষ্ঠান আয়োজনের ক্ষেত্রে 'শান্তিপুর পূর্ণিমা মিলনী' একটি অবিসংবাদিত নাম। 'সমন্বয় ই-ম্যাগাজিন' এই প্রতিষ্ঠানের উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি কামনা করে।


  • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিন পালন

সংবাদদাতা - সুশোভন মুখোপাধ্যায়ঃ ইই ব্লক আবাসিক সমিতির সমাজগৃহের প্রাঙ্গনে ২৬শে সেপ্টেম্বর বিদ্যাসাগর পাঠাগারের উদ্যোগে বঙ্গ নবজাগরণের অন্যতম পুরোধা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের ২০৪তম জন্মদিবস মহা সমারোহে পালিত হয়ে গেল। বিদ্যাসাগর পাঠাগার বিগত প্রায় দু'দশকেরও বেশি সময় ধরে এই প্রবাদপ্রতিম পুরুষের জন্মদিন পালন করে আসছেন। নানাবিধ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে ছিল। যেমন ছোটদের অঙ্কন, আবৃত্তি, তাৎক্ষনিক বক্তৃতা ও প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। এই অনুষ্ঠানে শিশু-কিশোর ও কিশোরীদের অংশগ্রহণ ছিল উৎসাহব্যঞ্জক। অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিশু-কিশোরদের সংখ্যা ছিল প্রায় দ্বিশতাধিক। এরা আসেন অনেক অনেক দূর থেকে যেমন বাটানগর, রাজারহাট, মধ্যমগ্রাম, নিউ ব্যারাকপুর প্রভৃতি স্থান থেকে। অনুষ্ঠানের সুচনা হয় স্থানীয় পাঠাগারের সম্মুখে স্থিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কোরক পত্রিকার সম্পাদক ও প্রাক্তন শিক্ষক তাপস ভৌমিক, আজকাল সংবাদ পত্রের সাংবাদিক অমিতাভ সিরাজ, অধ্যাপক জ্যোতির্ভূষণ দত্ত। জ্যোতির্ভূষন দত্ত তার বক্তব্যে বলেন যে, শুধুমাত্র সাহিত্য ও শিক্ষা ব্যতিরেকেও বিদ্যাসাগর মহাশয় যেভাবে সমাজের নবজাগরনের জন্য বিশাল ভূমিকা পালন করেছেন, বিশেষকরে তৎকালীন ব্রাহ্মণ সমাজের মাথায় পা রেখে তাদের প্রতিরোধে ব্রতী হয়েছেন এবং যে ভাবে সমাজের কল্যাণ সাধনের চেষ্টা করেছেন, তার ব্যাখ্যা করেন। স্বাগত ভাষণে সংস্থার সম্পাদক কুণাল বাগচী মহাশয় ঐ পাঠাগারের সম্পর্কে বলতে গিয়ে, প্রথমে পাঠাগারের সংস্কারের কথা উল্লেখ করেন। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন যে, কিছু সরকারি আইনের ফাঁকে ঐ সংস্থায় বৈদ্যুতিক সংযোগ করা যাচ্ছে না। ফলে সন্ধ্যা থেকে রাত্রিতে পাঠাগার অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকে। তাই তার অনুরোধ, যেভাবেই হোক সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এ ব্যাপারে তাদের সহযোগিতা করে অন্ততপক্ষে ঐ পাঠাগারে বৈদ্যুতিক সংযোগের ব্যবস্থা করেন। এতে ইই ব্লকের আবাসিকবৃন্দ, বিশেষকরে পাঠাগারের নিয়মিত সদস্যরা কৃতজ্ঞ থাকবে। অনুষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক অমর নাথ বন্দোপাধ্যায়। সমগ্র অনুষ্ঠানের পরিচালনা করেন কুণাল বাগচী মহাশয়।


  • গঙ্গাবক্ষে ইলিশ উৎসব

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ নদিয়া জেলার একটি সুপ্রাচীন মানবিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক প্রতিষ্ঠান 'শান্তিপুর পূর্ণিমা মিলনী' আজ তার সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষের দোরগড়ায়। ১২ মাসে ১৩ নয়, ২৪টি অভিনব শৈল্পিক কর্মসূচি তারা রূপায়িত করেন। কি নেই! চক্ষুদান, বস্ত্রদান, রক্তদান, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, মূকাভিনয়, অভিনয়, আমোদ-প্রমোদ আরও কত কিছু।

সম্প্রতি তারা আয়োজন করেছেন, লঞ্চে করে নাচে-গানে গঙ্গাবক্ষে বাঙালির অত্যন্ত প্রিয় ইলিশ উৎসব। প্রথম বছরেই আশাতীত সাফল্য পাওয়া গিয়েছে। সে এক নয়নাভিরাম দৃশ্য। ৮ থেকে ৮০ সবাই আহ্লাদিত। চার রকম ইলিশ পদ দিয়ে লোভনীয় এই উৎসব নাচে-গানে-কবিতায় জমে ওঠে। এখানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন ডাঃ অরূপ রায়, কাবেরী ভদ্র, স্বপ্না মাহাতো; নৃত্য পরিবেশন করেন স্বর্ণালী সাধুখাঁ, শিল্পী প্রামাণিক, দেবু মিত্র; আবৃত্তি করে শোনান সৌম্য খাঁ ও ইন্দ্রনাথ প্রামাণিক। এই প্রথম গঙ্গাবক্ষে ইলিশ উৎসবের চিন্তা বলে জানালেন সম্পাদক রূপায়ণ চৌধুরী। হৈ হৈ করে সারাটা দিন কিভাবে কেটে গেল, অনেকেই সেটা বুঝতে পারেননি। একটি লঞ্চে প্রায় ৬০ জন এই ইলিশ উৎসবে যোগদান করে। বিভিন্ন কারণেই এবার অনেকেই যেতে পারেননি। তাই আগামী বছরের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য এখন থেকে বহু মানুষ অপেক্ষায় দিন গুনছে।


  • সমতা ব্যাংকের ২৮তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী

সংবাদদাতা - সুশোভন মুখার্জিঃ ২৪ শে সেপ্টেম্বর, রবিবার কেক কেটে ইডি ব্লক, করুণাময়ীর প্রধান শাখা অফিসে 'সমতা কো-অপারেটিভ ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক'-এর ২৮তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী মহা সমারোহে পালন করা হয়। ২৭ বছর আগে সমবায়ের যে চারাগাছ বপন করা হয়েছিল, তা আজ বিরাট মহীরুহে পরিনত হয়েছে। ব্যাংকের আজ ৪৫০ কোটি টাকার ওপর আমানত। সল্টলেকের প্রধান শাখা ছাড়াও ব্যারাকপুর, সোনারপুর, দুর্গানগরে তিনটি শাখা আছে। ইতিমধ্যে বেহালা ও বারাসাত শাখা রিজার্ভ ব্যাংকের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। এই মহতী অনুষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন ব্যাঙ্কের বর্তমান চেয়ারম্যান আশিষ ঘোষ। অনুষ্ঠানের বিশেষ অঙ্গ ছিল স্বাস্থ্যশিবির। ব্যাংকের কর্মী, গ্রাহক ও স্থানীয় আবাসিকদের বিভিন্ন রকমের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। ইফকো টোকিও সাধারণ বীমা কোম্পানি, যারা এই ব্যাংকের বীমা সহযোগী, তাদের সহযোগিতায় এ্যাপোলো ডায়াগনষ্টিক সেন্টার স্বাস্থ্য পরীক্ষার দায়িত্ব নেয়। সেখানে উপস্থিত ডাক্তারেরা রক্তচাপ, মধুমেহ রোগ নির্ণয়ে রক্তপরীক্ষা, ইসিজি প্রভৃতির ব্যবস্থা রাখেন। সমগ্র অনুষ্ঠানটির পরিচালনায় থাকেন ওই ব্যাঙ্কের মুখ্য আধিকারিক দেবাশিস ভট্টাচার্য ও শাখা আধিকারিক সমিত মন্ডল।

সমতা কো-অপারেটিভ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক সারা বছর ধরে জনসেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকে। করোনার সময়েও মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়। 'করুণাময়ী সমন্বয় সমিতি'র বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও সবসময় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। তাই এই ব্যাংকের উন্নতির সঙ্গে এই অঞ্চলের উন্নতিরও প্রত্যক্ষ যোগ রয়ে যায়।


  • জাদুকর শ্যামল কুমার

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ জাদুকর শ্যামল কুমার দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ার সময় থেকে জাদুবিদ্যায় আকৃষ্ট হন। অষ্টম শ্রেণীতে ওঠার পর থেকে জাদুবিদ্যার ওপর প্রচুর বই সংগ্রহ করে হাতে কলমে জাদুবিদ্যার প্রয়োগ শুরু করেন এবং তখন থেকেই বিভিন্ন স্কুলে জাদুবিদ্যার প্রর্দশন করতে থাকেন। শিক্ষাগুরু হিসেবে পেয়েছেন জাদুসম্রাট পি. সি. সরকার, অশোক রায়, গৌতম গুহ, সমীরণ, ডি. লাল প্রমুখ। এরপর পেশাগতভাবে বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে জাদু প্রর্দশনী করতে থাকেন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় বিশেষকরে হিন্দুস্থান স্টান্ডার্ড, অমৃতবাজার পত্রিকা, সন্মার্গ, দৈনিক বিশ্বামিত্রে ওনার জাদু প্রর্দশনী প্রশংসিত হয়।

দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ও বিদেশে সাফল্যের সঙ্গে জাদু প্রর্দশনী করেছেন। অন্যতম সেরা জাদুকর হিসেবে যে সমস্ত সম্মান পেয়েছেন, তার মধ্যে আছে এবিপি গ্রুপের সালাম বেঙ্গল, হায়দ্রাবাদের মায়ামায়াম পুরস্কার, ইউএসএ'র অর্ডার অফ মার্লিন পুরস্কার। উনি জাদুবিদ্যার ওপর দুটি বই লেখেন 'এসো ম্যাজিক শিখি' ও 'সহজ তাসের ম্যাজিক শিক্ষা'।

বর্তমানে জাদুকর শ্যামল কুমার ঘরোয়া অনুষ্ঠানে বিশেষকরে জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী, পারিবারিক মিলন ক্ষেত্র, স্কুল, অফিস ক্লাব, পুজো প্যান্ডেল, পিকনিক ও বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে জাদু প্রর্দশন করে থাকেন। সল্টলেকে আমাদের প্রতিবেশী এই কৃতী জাদুকরের জাদু যারা দেখতে চান, তারা +৯১ ৭৯৮০৭ ১১৮০১ এই নম্বরে যোগাযোগ করুন।


  • 'বিকেলে ভোরের ফুল'-এর অনুষ্ঠান

সংবাদদাতা - সুদীপ ধরঃ সালটা ১৯৭৬, সাগরিকা মিত্রের সঙ্গে আমার পরিচয় চোরবাগানের মিত্র বাড়িতে গৃহবধূ রূপে আসার পরে। স্বামী ব্যাঙ্কের অফিসার অঞ্জন কুমার মিত্র, যদিও এই বর্ধিষ্ণু পরিবারের আসল পেশা 'বিষয়ভোগী' অর্থাৎ তাদের এতো বিষয়-আশয়! অন্যদিকে অত্যন্ত শিক্ষিত ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠা এক নারী। ঠাকুরদা ছিলেন কোলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি ও বিধান চন্দ্র রায়ের মন্ত্রীসভার শিক্ষা মন্ত্রী। শিক্ষা, সংস্কৃতির গভীর সমন্বয় এই গৃহবধূ বয়ে নিয়ে এসেছিলেন। তাই উনি আসার পরে দায়িত্বের সঙ্গে মিত্র বাড়ির প্রতিটি দুর্গা পুজোয় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নাচ, গান, আবৃত্তি, নাটক পরিবেশন করতেন।

বিধাননগর এবি ব্লকে আসার পর উনি নতুন উদ্যমে 'প্রয়াস' নামের একটি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী গঠন করেন। বিশেষকরে বাচ্চাদের নিয়ে বহু জায়গায় অনুষ্ঠান করেন। বিধাননগর মেলা ও রাসবিহারীর মহানির্বাণ মঠের অনুষ্ঠানের আমি একজন প্রত্যক্ষদর্শী। একটি চার বছরের বাচ্চার নিমাই সেজে প্রেমভাবে ঢলে ঢলে পড়া দর্শকেরা ভীষণ উপভোগ করেছিল। মঠের ভক্তদের মধ্যে আনন্দের হিল্লোল বয়ে যায়। এখানে একটা কথা বলা অপ্রাসঙ্গিক হবে না, তা হলো - সাগরিকা মিত্রের মা-কে আমার মায়ের লেখা একটা গল্পগ্রন্থ 'জীবনের কত রঙ' উপহার দিয়েছিলাম। দেখা হলেই উনি বলতেন, "তোমার মায়ের বই গীতার মতো বুকে করে রেখেছি, যখনই সময় পাই, তখনই পড়ি।" বই তো পায় অনেকেই, পড়ে ক'জন? এই মায়ের মেয়ে আর পাঁচজনের থেকে আলাদা হবে, সেটাই তো স্বাভাবিক।

সংসারের দায়িত্ব কিছুটা কমার পর নতুন উদ্যমে নব কলেবরে 'বিধাননগর তা থৈ কালচারাল একাডেমী' গড়ে তোলেন। এই সংস্থা আমন্ত্রিত হয়ে বিভিন্ন জায়গায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে চলেছে। বিধাননগর ও ভবানীপুর শাখায় মোট ১৮টি বিষয়ের ওপর দ্বিশতাধিক শিক্ষানবিশ আছে। এই সাংস্কৃতিক সংস্থার বাৎসরিক অনুষ্ঠান দু'দিন ব্যাপী করতে হয়। এত প্রশিক্ষিত শিল্পীর সংখ্যা!

এতক্ষণ শুধু মুখবন্ধ। সাগরিকা মিত্রের আসল চমক, তার মস্তিষ্ক প্রসূত 'বিকেলে ভোরের ফুল'। সফল প্রবীণা মহিলাদের নিয়ে তৈরি এই প্রতিষ্ঠান। এর শুভযাত্রা শুরু হয়েছিল গুটিকয়েক সদস্যা নিয়ে ৪ঠা মার্চ, ২০২২। বর্তমানে সদস্য সংখ্যা ২৩। গড় বয়স ৭৫ বছর। প্রতি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওঁনারা মিলিত হন এবি২৮-এর মূল অফিসে। যখন ওনারা নিজেদের অনুষ্ঠান শুরু করেন, তখন গড় বয়স ৭৫ থেকে নেমে হয়ে যায় ৩০।

৩রা অক্টোবর, মঙ্গলবারের অনুষ্ঠানের প্রধান অভিমুখ ছিল, গৃহকর্তা অঞ্জন মিত্রের জন্মদিন উপলক্ষে কেক কাটা ও খাওয়া দাওয়া। সভানেত্রী ছিলেন ডঃ মিনাক্ষী সিনহা। এরপর ডঃ শিখা সেনগুপ্তের গান 'সেদিন দুজনে, দুলেছিনু বনে'-র সঙ্গে মিত্র দম্পতির বিভিন্ন ভঙ্গি ও মুদ্রা সহযোগে নাচ। সভায় হাসির রোল বয়ে যায়, সকলেই এটিকে খুব উপভোগ করে। এরপর সমবেত সঙ্গীত হয়, 'আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর'। পরিশেষে দত্তাবাদের এনজিও 'প্রচেষ্টা'র আমন্ত্রণে আগামী ৩০ অক্টোবর রবীন্দ্র ওকাকুরা ভবনে শ্রুতিনাটক 'বৌমা পাঁচালী' পরিবেশিত হবে, তারই মহড়া চলে। শুধু যে ঘরোয়া অনুষ্ঠান হয়, এমন নয়। মাঝে মাঝে দলবদ্ধ ভাবে বেড়াতেও যান। ইতিমধ্যে যে সব জায়গায় বেড়ানো হয়েছে, তাদের নাম যথাক্রমে নিউটাউন এয়ারক্রাফ্ট মিউজিয়াম, বাগবাজার মায়ের বাড়ি ও গঙ্গার ঘাটে, গৌরীবাড়ি ইস্কন মন্দির। ভবিষ্যতের জন্য তোলা আছে, যথাক্রমে আলিপুর সেন্ট্রাল জেল মিউজিয়াম, হাওড়া রেল মিউজিয়াম, ব্যারাকপুর গান্ধী ঘাট, অন্নপূর্ণা মন্দির ও খিদিরপুর জগন্নাথ মন্দির।

আজকের সভায় যারা উপস্থিত ছিলেন তারা হলেন যথাক্রমে ডঃ মিনাক্ষী সিনহা, মিনতি সিনহা, সুজাতা গুপ্ত, ডঃ শিখা সেনগুপ্ত, শ্যামলী ঘোষ, মধুমিতা ভদ্র, সবিতা বাসু, অলকা সাহা, কণিকা চক্রবর্তী, স্বাতী ভট্টাচার্য, মঞ্জুশ্রী বসু, পূর্ণা চ্যাটার্জি, ডঃ জলি সেনগুপ্ত, লক্ষ্মী সাহা, স্বাতী চৌধুরী, সীমা চৌধুরী, শম্পা গাঙ্গুলি, উমা চক্রবর্তী, রেবা পোদ্দার ও সাগরিকা মিত্র।

এখন শুধু পরের মঙ্গলবারের অপেক্ষা!

  • অঞ্জন কুমার মিত্রের জন্মদিন পালন

সংবাদদাতা - সুদীপ ধরঃ তখন ১৯৭৩ সাল, আমি গিয়েছি ব্যাঙ্ক অফ বরোদার বড়বাজার ব্রাঞ্চে, ব্রাঞ্চ ম্যানেজার রমেন রায়চৌধুরীর কাছে। এলআইসি'র তরফ থেকে চলছিল সার্ভিসিং ড্রাইভ। রমেন বাবু আমার সঙ্গে অঞ্জন মিত্রের পরিচয় করিয়ে দেন। প্রথম দর্শনে একটা আকর্ষণ অনুভব করেছিলাম, পরিচয় গভীর হতে জানলাম, উনি চোরবাগানের বনেদী মিত্র বাড়ির ছেলে, মামার বাড়ি হাওড়ার রামকৃষ্ণপুরের জাহাজের ব্যবসায়ী ই. সি. বোসের পরিবার, ছোট মামা স্বপন সাধন বোস, যিনি টুটু বোস বলে প্রখ্যাত। বিভিন্ন আত্মীয় স্বজন সমাজে উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত। বাড়ির দুর্গা পুজো তিনশো বছরের পুরনো, এও জানলাম লর্ড ক্লাইভকে এরা টাকা দাদন দিতেন, যাকে বলে সোনার খনি। সোনার ছড়ি দেখেছি, হীরের গয়না দেখেছি, দেখেছি নাচমহল, বিয়েও করছেন পান্নালাল বোসের নাতনিকে, যিনি ভাওয়াল সন্ন্যাসী মামলার জাজমেন্ট দিয়েছিলেন, ছিলেন বিধান চন্দ্র রায়ের ক্যাবিনেটের শিক্ষা মন্ত্রী। দুই মামাশ্বশুর উচ্চপদে আসীন ছিলেন, ছিলেন অকৃতদার, বর্তমানে প্রয়াত। একেই বলে কপালের নাম গোপাল। নিজে দুঁদে উকিল, ছেলেও সম্পর্কে ঠাকুরদা প্রাক্তন এডভোকেট জেনারেল অনিন্দ্য মিত্রের সুযোগ্য ছাত্র। একি ধান ভানতে শিবের গীত!

সম্পর্ক গভীর হতে সময় নেয়নি। ওনার ঠাকুরদাদা, বাবা, মা, জ্যেঠতুতো দাদা ও শরিকেরা মুক্তারাম বাবু স্ট্রীটের কাছে মিত্র লেনে দু'টি তিন মহলা বাড়িতে থাকতেন। ওনার মা, বাবার সাথে সখ্যতা ছিল, ঠাকুরদাদার সঙ্গে পাঞ্জা লড়েছি। হুগলির বাগান বাড়িতে বহুবার গিয়েছি। ততদিনে উনি ব্যাঙ্ক অফ বরোদা ছেড়ে ফেডারেল ব্যাঙ্কের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার হয়েছেন। ক্লাইভ রোর ফেডারেল ব্যাঙ্কে এরিয়া ম্যানেজারের দায়িত্ব সামলেছেন। সেই সময় একদিন বললেন, "একটা লোনের প্রপোজাল আটকে আছে, চলুন আপনি আমি কেরেলার হেড অফিসে গিয়ে ওটা পাশ করিয়ে আনি।" আমার তো সাদা মনে কাদা নেই। ওনাকে সঙ্গ দিতে গেলাম। তারপরে তো অবাক কান্ড! কোনো ম্যাজিসিয়ান যেন এসে বলল, "সিম সিম খুল যা।" কোথায় কেরালা, এসে পড়লাম ব্যাঙ্গালোর এয়ারপোর্টে। ব্যাঙ্গালোর থেকে তিরুপতি, সেখান থেকে মাইশোর, মাইশোর থেকে উটি, চমকের পর চমক। সম্পর্ক কতটা গভীর হলে অনায়াসে সবাইকে বলতেন, "আমায় নিমন্ত্রণ করছেন ঠিক আছে, আমার সঙ্গে কিন্তু ধরবাবু যাবে। কত ভালো ভালো হোটেলে খেয়েছি, কত সফল লোকের বাড়িতে খেয়েছি তার ঠিক নেই। এও শুনতে হয়েছে, ধরবাবুকে দেখলে মিত্রবাবু দিওয়ানা হয়ে যায়। সে সবতো হারিয়ে যাওয়া সুখের দিন।

প্রথম দিকে মিত্র লেনে আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব নিয়ে জাঁকজমক করে ২রা অক্টোবর জন্মদিন পালিত হতো। পরবর্তীকালে সল্টলেকে এসে সেই ধারা বজায় ছিল। বিগত ৫০ বছর ধরে ওনার জন্মদিনে আসার সুবাদে দেখেছি মাঝে কিছু দিন ভাঁটার টান ছিল। নিকট আত্মীয় স্বজন অধিকাংশ প্রয়াত, অনেকে কর্মসূত্রে বাইরে বা বাইরে ছেলেমেয়ের কাছে থেকে যেতে হচ্ছে। তাই জৌলুস কমতে থাকে।

২০২২ সালে সাগরিকা মিত্রের মস্তিষ্কপ্রসূত 'বিকেলে ভোরের ফুল'-এর আবির্ভাবের পর, আবার অঞ্জন মিত্রের জন্মদিন পালনে জোয়ার আসে। এই প্রথমবার দেখলাম, দু'দিন ধরে জন্মদিন পালন হচ্ছে, কেক কাটা হচ্ছে। ডঃ শিখা সেনগুপ্তের গান, 'সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে'-র সঙ্গে কর্তা-গিন্নীকে শরীর দোলাতে দেখেছি। এও দেখা, এক পরম সৌভাগ্য।

পরম করুনাময় ঈশ্বরের কাছে অঞ্জন মিত্রের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘজীবন কামনা করছি, একই সাথে আরো ১০ বছর ওঁনার জন্মদিনে উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য প্রার্থনা করছি।