স্থানীয় খবর

  • 'খোয়াই' ও 'প্যাশন গ্রুপ'-এর বিজয়া সম্মেলন

সংবাদদাতা - সুশোভন মুখোপাধ্যায়ঃ করুণাময়ীর দুই নামী সাংস্কৃতিক সংস্থা 'খোয়াই' ও 'প্যাশন'-এর যৌথ উদ্যোগে বিগত ১০ই নভেম্বর, শুক্রবার বিকেল ৫টা থেকে রবীন্দ্র ওকাকুরা ভবনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বিজয়া সম্মেলন। সাড়ে তিন ঘণ্টা ব্যাপী মনোজ্ঞ এই অনুষ্ঠান দর্শক ও শ্রোতাদের মনোরঞ্জনে সমর্থ হয়।

শুরুতে চৈতি রায়ের পরিচালনায় ৬ জন শিল্পীর উদ্বোধনী সংগীত দিয়ে এই দিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুভসূচনা হয়। তারপর ৩ জন শিশুশিল্পী যথাক্রমে সমদর্শী চট্টোপাধ্যায়, সায়ন মুখোপাধ্যায়, অদ্রিশা ঘোষ রবীন্দ্রসংগীত ও আধুনিক গান পরিবেশন করে। উপস্থিত দর্শকেরা করতালি দিয়ে তাদের উৎসাহিত করে। এরপরে ছিল কবিতা-কোলাজ। নিবেদিতা সাহা ও ময়ূরী সাহার কবিতা কোলাজ দর্শকদের মন জয় করে নেয়, সঙ্গে গানে ছিলেন সমন্বিতা দাস ও মৌসুমী তপাদার।

মঞ্চে দু'জন বিশিষ্ট বেহালাবাদক দেবশংকর রায় ও জ্যোতিশংকর রায় এবং অভিনেতা, গায়ক বাসুদেব পাল-কে উত্তরীয়, পুস্পস্তবক ও স্মারক দিয়ে সম্বর্ধিত করা হয়। তিনজনের সামান্য বক্তব্যের পরে বাসুদেব পাল পল্লীগীতি গেয়ে শোনান। তাঁর জোরালো কণ্ঠের গান দর্শকরা উপভোগ করে। সমগ্র অনুষ্ঠানটিকে টান টান করে বেঁধে রেখেছিলেন যে সঞ্চালিকা সুতপা দত্ত ভান্ডারী, তিনি মঞ্চে ডেকে নেন 'প্যাশন গ্রুপ'-এর সদস্যাদের। মৌ চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ৪টি সমবেত সঙ্গীত গেয়ে শোনান চৈতি রায়, শুক্লা বোস, কুহু গাঙ্গুলি, পারমিতা বোস, নিলীমা সরকার ও মৌ চট্টোপাধ্যায়। দর্শকরা এই অনুষ্ঠানটিও উপভোগ করে।

পরবর্তী পর্যায়ে 'রূপকথা' আবৃত্তি সংস্থার তরফ থেকে পরিবেশন করা হয় কবিতায় অপেরা। শুভময় মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ইউরোপীয়ান অপেরার আদলে নিবেদিত হয় 'আবোল তাবোল', 'ছিপখান তিনদাঁড়' ও 'পূজারিণী'। অংশগ্রহণে শুভময় মুখোপাধ্যায়, ইন্দ্রানী মজুমদার, মৌসুমী মুখার্জি চ্যাটার্জি ও মহুয়া মাশ্চারাক। মনোমুগ্ধকর এই অনুষ্ঠান সকলের হৃদয় মন ছুঁয়ে যায়।

এরপর সম্বর্ধনা দেওয়ার জন্য মঞ্চে ডেকে নেওয়া হয় প্রশাসনিক আধিকারিক ও শিক্ষক নীলাচল চট্টোরাজ এবং কবি ও আবৃত্তিকার তৃপ্তি কুন্ডু রায়কে। উত্তরীয়, পুস্পস্তবক ও স্মারক দিয়ে সম্বর্ধিত করা হয়। নীলাচল চট্টোরাজের বক্তব্যের পরে তৃপ্তি কুন্ডু রায়ের জোরালো কণ্ঠের আবৃত্তি সবাইকে বিমুগ্ধ করে রাখে।

এতক্ষণ অপেক্ষার অবসান ঘটে যখন মঞ্চে আসেন 'খোয়াই'-এর কর্ণধার অমিয়া চক্রবর্তী, নিবেদিত হয় 'বিজয়া' নৃত্যনাট্য। আবৃত্তিতে ছিলেন শুভময় মুখোপাধ্যায় ও চন্দনা বাসু, গানে সমন্বিতা দাস, মৌসুমী তপাদার, রঞ্জিতা মুখোপাধ্যায় ও অমিয়া চক্রবর্তী, নৃত্যে সুস্মিতা চ্যাটার্জি, সুকন্যা ব্যানার্জি ও জয়দ্রিতা দাস। বিষয় বৈচিত্র্য, উপস্থাপনা, সঙ্গীত ও নৃত্যের মেলবন্ধনে যে মননশীল নৃত্য-গীতের শৈলী উপস্থাপিত হয়, তার মূর্ছনায় দর্শকরা আবিষ্ট হয়ে যায়।

পরিশেষে আসে সুমিতা সাহার পরিচালনায় 'গীতম' নৃত্যগোষ্ঠী। তাদের শিল্পীদের পরিশীলিত নৃত্য পেশাদারিত্বের ছাপ রাখে। হবে নাই বা কেন, এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার সুমিতা সাহা দীর্ঘদিন ধরে যে, একটা নাচের স্কুল চালাচ্ছেন। এদিনের অনুষ্ঠানে যারা নৃত্যে অংশগ্রহণ করে, তাদের নাম যথাক্রমে সাগরিকা মান্না, মোনালিসা মান্না, আকাঙ্খা দীপ, রীতিকা দাশ, শর্মিলা দাশ, দেবলীনা তূরি, স্বাতী রায়, সোমা হালদার, মিনু কানোজিয়া ও সুমিতা সাহা।

সমগ্র অনুষ্ঠানটিকে মনোজ্ঞ করে তুলতে যে সমস্ত যন্ত্রশিল্পীরা সহায়তা করেছেন, তাঁরা হলেন যথাক্রমে সুজিত সাহা, সন্দীপ রায় ও রাজা চক্রবর্তী।

'খোয়াই' ও 'প্যাশন'-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত বিজয়া সম্মেলনীর সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা এককথায় অনবদ্য। আর এ কথা বলাই যায় আসছে বছর দর্শক, শ্রোতারা এই ধরনের মনোগ্রাহী অনুষ্ঠানের জন্য অবশ্যই অপেক্ষায় থাকবে।


  • 'বিকেলে ভোরের ফুল'-এর অনুষ্ঠান

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ গত ৭ই নভেম্বর, মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় সংস্থার কার্যালয়, এবি-২৮, সল্টলেক সিটি, কোলকাতা-৭০০০৬৪-তে 'বিকেলে ভোরের ফুল'-এর বিজয়া সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সভানেত্রী ডঃ মীনাক্ষী সিংহ উপস্থিত সকল সদস্যদের শুভ বিজয়ার প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানান। সদস্যরা পরস্পর পরস্পরকে বিজয়ার শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং ছোটরা বড়দের প্রণাম করে আশীর্বাদ প্রার্থনা করে। উচ্ছ্বাস, হাসি, আলিঙ্গন ও হৃদয়ের উষ্ণতা দিয়ে পরস্পর পরস্পরকে বেঁধে ফেলে ভালোবাসার বন্ধনে। 'সমন্বয়' ওয়েব ম্যাগাজিনের সম্পাদক সুদীপ ধর সৌভাগ্যক্রমে আমন্ত্রিত হয়ে ওইদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বিশেষভাবে লক্ষ্য করেছেন, যদিও সদস্যাদের গড় বয়স ৭৫-এর ওপরে, কিন্তু যখন কোনো অনুষ্ঠান শুরু হয়, তাঁদের গড় বয়স নেমে হয় ৩০। শুধু এই বৈশিষ্ট্যের জন্য, এই প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা সুস্থ দেহ-মন নিয়ে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকবেন।

পরবর্তী পর্যায়ে থাকে গানের আসর। বিশেষ পছন্দ সমবেত সঙ্গীত। সকলের অংশগ্রহণে পরিবেশ তখন অন্য মাত্রায় পৌঁছয়।

পরের বিষয় ছিল 'সংবাদ প্রতিদিন'-এ দেওয়া শব্দছকের সমাধান। দেখা গেল "আমি পেরেছি, আমি পেরেছি" বলে অধিকাংশ সদস্য সভানেত্রীকে ঘিরে ধরেছেন, আধঘন্টা বাদেও জানা গেল না, আদতে কে পেরেছে? এরপর 'বিকেলে ভোরের ফুল' হয়ে গেল বিকেলে ভোজের আসর। অলকা সাহার প্রথম নাতনি হওয়ার আনন্দে 'বাঞ্ছারাম' থেকে খাবার আনিয়ে সকলকে খাওয়ান। আমাদের সম্পাদকও সেই আনন্দের ভাগীদার ছিলেন।

সেদিনের সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, পরবর্তী কর্মসূচি সংস্থার সদস্যাদের 'আলিপুর জেল মিউজিয়াম পরিদর্শন'। প্রাণবন্ত এই আসরে তিন ঘণ্টা সময় যে কিভাবে পার হয়ে যায়, সে বিষয়ে কারো কোনো খেয়াল থাকে না।

সভায় উপস্থিত সদস্যরা হলেন যথাক্রমে সভানেত্রী মীনাক্ষী সিংহ, অলকা সাহা, মিনতি সিনহা, মঞ্জুশ্রী বসু, জলি সেনগুপ্ত, কণিকা চক্রবর্তী, রেবা পোদ্দার, সাগরিকা মিত্র, পূর্ণা চ্যাটার্জি, শিখা সেনগুপ্ত, সবিতা বসু, মধুমিতা ভদ্র, শ্যামলী ঘোষ, শম্পা গাঙ্গুলি, সীমা চৌধুরী, স্বাতী চৌধুরী, স্বাতী ভট্টাচার্য ও সুজাতা গুপ্ত।

  • অন্তরের স্পর্শে বিজয়া সম্মেলনী

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ গতকাল অর্থাৎ পাঁচ নভেম্বর, রবিবার কৃষ্ণ চন্দ্র রায় পাগলা গোস্বামী জিউ বাড়ির নাটমন্দিরে 'শান্তিপুর পূর্ণিমা মিলনী' এক আড়ম্বরপূর্ণ বিজয়া সম্মেলনীর আয়োজন করে। 'শান্তিপুর পূর্ণিমা মিলনী' শুধু শান্তিপুর নয়, সমগ্র নদীয়া জেলার শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সমাজসেবার অঙ্গনে অতি সুপরিচিত একটি নাম। ঐতিহ্য ও পরম্পরার মেলবন্ধনে আয়োজিত এই বিজয়া সম্মেলনী যে অনন্য এক মাত্রায় অবস্থান করবে, সেটাই তো স্বাভাবিক।

পরিশীলিত, সুসজ্জিত মঞ্চে বিশিষ্ট অতিথিরা বিজয়ার প্রীতি ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং প্রত্যেকের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘজীবন কামনা করেন। তারপর পরিবেশিত হয় উচ্চমানের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এখানে যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে তাদের মধ্যে অন্যতম 'সোনার তরী' ও 'ভর্ণিকা' নৃত্য প্রতিষ্ঠান, 'কাকলি আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র', 'রাইকিশোরী' এবং 'আবহ' সংস্থা চমৎকার অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন। এছাড়া ডাঃ অরূপ রায়, রূপম ভট্ট ও সিভিক রাজার গান সবার মন জয় করেছে। অনুষ্ঠানের সেরা রূপায়ণ চৌধুরী রচিত অভিনীত নাটিকা 'মন্ত্র বিভ্রাট'। ইন্দ্রনাথ ও দেবকুমারের অভিনয় বেশ সপ্রতিভ। তবে রূপায়ণ চৌধুরীর তোতলা অভিনয়ের মুন্সিয়ানায় ছোট থেকে বড় পুরো নাটকে শুধুই মন খুলে অনাবিল হেসেছেন। যা বহুদিন দর্শকেরা মনে রাখবেন।

বিজয়ার সেরা পাওনা সংস্থার সভ্যাদের হাতে তৈরি মোয়া, নাড়ু, মিস্টান্ন ইত্যাদি। শুভেচ্ছা প্রদান করেন সনৎ চক্রবর্তী, উদয়ন মুখার্জী, পঙ্কজ সান্যাল, পার্থ প্রামাণিক ও কমিশনার অরুণ বসাক। আবার এক বছরের দীর্ঘ অপেক্ষায় অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি হয়। এই অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করতে প্রচুর জনসমাগম হয়। 'শান্তিপুর পূর্ণিমা মিলনী'র ক্ষেত্রে সেটাই তো স্বাভাবিক।


  • সম্পাদকের বাড়ির দুর্গোৎসব

বিশেষ সংবাদদাতাঃ 'করুণাময়ী সমন্বয় সমিতি'র সম্পাদক, ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের পৌরপিতা ও পাঁচ নম্বর বোরোর চেয়ারম্যান রঞ্জন পোদ্দারের বাড়ির দুর্গোৎসব মহাধুমধাম করে প্রতিবারের মতো এবারও উদযাপিত হয়। প্রচুর বিশিষ্ট মানুষের উপস্থিতিতে ষোড়শোপচারে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই অঞ্চলের সকল স্তরের মানুষের অংশগ্রহণে, বিশেষ করে মহিলাদের দ্বারা সংঘটিত 'দুর্গাবাহিনী'র প্রাণবন্ত সহযোগিতায় নিয়মনিষ্ঠা সহকারে পবিত্র ভাবগম্ভীর পরিবেশে এই পূজা পালিত হয়।

চতুর্থীর দিন মায়ের প্রতিমার আগমন, শুদ্ধাচারে বরণ, আর নামে দুর্গাবাহিনীর সদস্যাদের ঢল। পূজামন্ডপে তিলধারণের জায়গা নেই। প্রতিমার মুখ দেখে তখন কার সাধ্য! মুহূর্তে বাড়ি হয়ে গেল মন্দির! শুরু হয়ে গেল উৎসব। এক বছর অপেক্ষার পর মনে হলো, এ যেন শুকনো গাঙে বান ডেকেছে!

পঞ্চমীর দিন চন্ডীপাঠ। ষষ্ঠীর দিন গৃহদেবীর অধিবাস উপলক্ষে সাজসজ্জা ও আলপনা দেওয়া। দুর্গা প্রতিমাকে স্বর্ণালঙ্কারে ভূষিত করা ও দেবীর হাতে অস্ত্রদান।

সপ্তমীর দিন ভোর পাঁচটায় দুর্গাবাহিনীর পরিবারের সদস্যরা ম্যাটাডোর ও ব্যক্তিগত গাড়িতে বোঝাই হয়ে সারদা মায়ের ঘাটে নবপত্রিকা স্নান, ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভের ব্যবস্থা করে। সায়ংকালে শ্রীশ্রী দুর্গা দেবীর বোধন, আমন্ত্রণ, মায়ের অধিবাস।

সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত প্রতিদিন দেবীকে ভোগ নিবেদন, পূজাপাঠ, আরতি ও পুষ্পাঞ্জলির আয়োজন। সপ্তমীতে খিচুড়ি ভোগ, অষ্টমীতে পোলাও ভোগ, নবমীতে ফ্রাইড রাইস ও দশমীতে মাছ, মাংস। সন্ধিপুজোয় ১০৮ প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, ১০৮ পদ্ম নিবেদন ও আখ, বাতাবি, চালকুমড়ো, শশা, কলা প্রভৃতি বলিদান হয়। দশমীর সকালে অপরাজিতা পূজার পর দই-পান্তা-কচুশাকের আয়োজন করা হয়।

পঞ্চমী থেকে প্রতিমা নিরঞ্জন পর্যন্ত এই পুজোর সঙ্গে যারা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ছিলেন, তাদের অন্যতম সহেলী রায়, দিলীপ রায়, দেবযানী রায়, রীতা পোদ্দার, প্রণয় পোদ্দার, নিবেদিতা ধর, মিতা রায়, শর্মিলা চৌধুরী, শ্যামল চৌধুরী, সুকুমার মান্না, শুদ্ধদেব ব্যানার্জি, অঞ্জন পোদ্দার, বৈশালী মান্না, শুভাঙ্গী মান্না, সুমনা হোড়, রায়া আদিত্য, শিউলি আদিত্য, মৌমিতা ব্যানার্জি, দুষ্মন্ত কেডিয়া, তানিয়া সাহা, চৈতালি দাস, সবিত্রি মুখার্জি, শুভময় সাহা, ডাঃ গরিমা সরকার, দীপু কাপুরিয়া, শাশ্বতী বন্দোপাধ্যায়। এছাড়া ছিলেন গৃহকর্তা রঞ্জন পোদ্দারের ছোটবেলার বন্ধুরা, সুষমা পোদ্দারের স্কুল, কলেজ জীবনের বন্ধুরা, ডিপিএস স্কুলের ভাইস প্রিন্সিপাল, আইএএস, আইপিএস অফিসার, কৃতী ব্যবসায়ী, বিদেশি অতিথি ও এই অঞ্চলের অগণিত জনসাধারণ। ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত দুবেলা অতিথি আপ্যায়নের সুব্যবস্থা থাকে।

এই পুজোর অন্যতম আকর্ষণ দেবীবরণ, কনকাঞ্জলি অর্পণের পর 'দুর্গাবাহিনী'র সিঁদুর খেলা ও ঢাকের তালে তালে উদ্দাম নৃত্য। এই সিঁদুর খেলা প্রত্যক্ষ করতে আসেন তিনজন বিদেশি অতিথি। প্রতিমা বিসর্জনের পর দুর্গাবাহিনীর "আসছে বছর আবার হবে" চিৎকারে বিসর্জনের ঘাট মুখরিত হতে থাকে।

এই বাড়ির পুজোর আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, এখানে পুজোর ঘট বিসর্জন হয় না। ঘট ও অষ্টধাতুর তৈরি দেবীমূর্তি সারা বছর পূজিতা হয়ে থাকেন। পরিশেষে থাকে প্রণাম ও কোলাকুলির মাধ্যমে সৌহার্দ বিনিময় এবং মিষ্টিমুখের আয়োজন। এইভাবেই 'দুর্গাবাহিনী'র ১৪৩০ সালের দুর্গাপূজার পরিসমাপ্তি ঘটে।


  • জাদুবিদ্যায় মনোরঞ্জন

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ 'করুণাময়ী সমন্বয় সমিতি'র আজীবন সদস্য, কৃতী জাদুকর শ্যামল কুমার এইবারের দুর্গাপুজোয় বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে ও একাধিক পুজোমন্ডপে জাদু প্রর্দশন করে সুখ্যাতি অর্জন করেছেন।

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জাদুকর শ্যামল কুমারের বৈশিষ্ট্য হলো, নতুন নতুন ধরনের ম্যাজিক দর্শকদের পরিবেশন করা। এবারের দুর্গাপুজোয় উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠানগুলির মধ্যে আছে ডিডি বাংলা চ্যানেল, রোটারি ক্লাব, সল্টলেক সিটি, 'এএ' ব্লক, 'এএল' ব্লক, লেকটাউন অ্যাসোসিয়েশন প্রভৃতি।

তাঁর জনপ্রিয় খেলাগুলির অন্যতম হচ্ছে দর্শকদের মনের ভাবনা পড়ে ফেলা, নতুন ধরনের দড়ির খেলা বা রিং-এর খেলা, শিশুদের নিয়ে রঙের খেলা - যা ৫ থেকে ৮৫ বছর পর্যন্ত দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে।

সত্যি কথা বলতে কি, সার্কাসের মতো জাদুবিদ্যাও আজ সমাজ থেকে লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে, সেক্ষেত্রে শ্যামল কুমার-এর মতো কিছু ব্যক্তি যে এই বিজ্ঞানকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন, সেজন্য তাঁদের অকুণ্ঠ সাধুবাদ প্রাপ্য।


  • করুণাময়ী 'এফ' ব্লকের সার্বজনীন দুর্গোৎসব

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ করুণাময়ী 'এফ' ব্লকের দুর্গাপূজা বহু মানুষের সক্রিয় সহযোগিতায় ও বহু মানুষের অংশগ্রহণে এ বছর অন্য উচ্চতায় পৌঁছে যায়। আড়ম্বরপূর্ণ ও আন্তরিকতায় ভরা এই পুজো করুণাময়ীর সকল স্তরের মানুষের কাছে অনন্য পুজো হিসেবে স্বীকৃতি আদায় করে নেয়। চারদিন ধরে উচ্চমানের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সঙ্গে বসে আঁকো প্রতিযোগিতা এই পুজোর অন্যতম আকর্ষণ ছিল।

যাবতীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে বিশেষকরে যে দুটি অনুষ্ঠান সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, তার একটি হলো, ২২শে অক্টোবর, রবিবার, সন্ধ্যা ৭-৩০ টায় করুণাময়ী সমন্বয় সমিতির পরিচালন সমিতির সদস্যা ইন্দিরা ব্যানার্জির পরিচালনায় "মহাষ্টমীর মহাক্ষণে মাতৃবন্দনা বা মাতৃস্তুতি"। ২০ মিনিটের মনকাড়া অনুষ্ঠানে সঙ্গীতে অংশগ্রহণ করে রীতা বসু, নিলীমা চ্যাটার্জি, শিউলি আদিত্য, রাণু দোলুই। নৃত্যে সুকন্যা ব্যানার্জি ও তবলায় সহযোগিতা করেন সন্দীপ রায়।

এরপরে ছিল করুণাময়ী সমন্বয় সমিতির সদস্যদের ১৫ মিনিটের চোখ ধাঁধানো নৃত্যানুষ্ঠান। নৃত্য পরিচালনায় মৌমিতা ব্যানার্জি, ভাবনায় তানিয়া সাহা, সম্পাদনায় শরণ্য ঘোষ। অংশগ্রহণে মৌমিতা ব্যানার্জি, তানিয়া সাহা, দীপু কাপুরিয়া, শাশ্বতী বন্দোপাধ্যায়, রেশমী কুমার ও কুমকুম চৌধুরী। উপস্থিত দর্শকরা প্রতিটি অনুষ্ঠানের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন।

২৪শে অক্টোবর, মঙ্গলবার, দশমীর দিন সকাল ১০টায়, পূজা মন্ডপে তিনটি বিভাগে বসে আঁকো প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। একটি বিভাগ ৪ থেকে ৬ বছর; অপরটি ৭ থেকে ১০ বছর; শেষেরটি ১১ থেকে ১৪ বছর। প্রথমটির বিষয় "যা খুশি আঁকো, দ্বিতীয়টির "ভারতীয় গ্রাম ও অন্তত একজন মানুষের ছবি", তৃতীয়টির "যে কোনো ভারতীয় উৎসব"।

৪ থেকে ৬ বছর বিভাগে প্রথম অনন্য মাইতি, দ্বিতীয় সৌভির রায়, তৃতীয় মৃন্ময়ী গায়েন। সান্ত্বনা পুরস্কার পায় আধ্যন্ত ঝুনঝুনওয়ালা। ৭ থেকে ১০ বছর বিভাগে প্রথম শাহিন চক্রবর্তী, দ্বিতীয় আয়ূস্মান ব্যানার্জি, তৃতীয় পরমাদৃত চ্যাটার্জি। সান্ত্বনা পুরস্কার পায় জ্যোতিপ্রিয় লাহিড়ী, অর্চিস্মান কর, পর্ণাভি সাহা, সম্পূর্ণা গুহ, আদৃত বাসু, আনন্দী চক্রবর্তী, শ্রেয়ন দাস, স্বয়ম দত্ত, শ্রেয়া ব্যআনআর্জই, ঐশানি চক্রবর্তী, আশমায়ূ আইচ, সৌম্য ভট্টাচার্য, যোষিৎ ভার্মা।

১১ থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত বয়সের বিষয়, "যে কোন ভারতীয় উৎসব"। প্রথম কুণাল ঘোষ, দ্বিতীয় বিশ্বশ্রেয়া পয়রা, তৃতীয় দীপাংশু জানা। সান্ত্বনা পুরস্কার যারা পেয়েছে, যথাক্রমে তাদের নাম ঐশানি মল্লিক, অদিত্রী মল্লিক, অনুপম পাত্র, তেজস ভার্মা, জয়শ্রী দাস, সমদর্শী সেন, কৌশানি সেন প্রমুখ।

বিচারকের আসন অলংকৃত করেন সমন্বয় ওয়েব ম্যাগাজিনের শিল্প নির্দেশক রাজর্ষি দত্ত রায়। প্রতিযোগী ও অভিভাবকদের উপস্থিতিতে এই অনুষ্ঠানও সর্বতোভাবে সফল হয়।


Ananya Maity (Age: 6 years) receiving Prize from Sri R. D. Roy.


Mrinmoyee Gayen (Age: 5 years)


Ananya Maity (Age: 6 years) [Prize winner]


Souveer Roy (Age: 6 years)


Sahin Chakraborty (Age: 9 years)


Ayushman Banerjee (Age: 9 years)


Paramaditya Chatterjee (Age: 9 years)


Dipangshu Jana (Age: 11 years)


Kunal Ghosh (Age: 12 years)


Biswashreya Paira (Age: 13 years)


  • ভূ-পর্যটক বিশ্বনাথ পাল

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ এখন আপনাদের সামনে হাজির করছি সল্টলেক নিবাসী স্বনামধন্য ভূ-পর্যটক বিশ্বনাথ পাল-কে, যাঁর পূর্বপুরুষ ৩৫০ বছর আগে উত্তর কলকাতার বাগবাজার অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেন। বাগবাজার সার্বজনীন দুর্গোৎসব এই পরিবারের হাত ধরেই যাত্রা শুরু করে, যে পুজোর সঙ্গে একদা নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু ও দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ যুক্ত ছিলেন।

বর্ধিষ্ণু, অভিজাত পরিবারের সদস্য বিশ্বনাথবাবু আদতে একজন অত্যন্ত সফল ব্যবসায়ী। তিন পুরুষের সিমেন্টের ব্যবসা। ওঁনার ব্যক্তিগত ব্যবসার টার্নওভার বছরে ৪০ কোটি টাকা। সেই ব্যবসার সূত্রে প্রতি বছর দেশে এবং বিদেশে একাধিক বার যাওয়ার সুযোগ ঘটে। ১৯৭৫ সাল থেকে পায়ে চাকা লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, চষে ফেলেছেন ভারতের সব তীর্থক্ষেত্র, জঙ্গল, পাহাড়, সমুদ্রতীর। পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য দেখেছেন, পৃথিবীর সেরা ২১টি দ্রষ্টব্য স্থানের মধ্যে ১৯টি দেখে ফেলেছেন। ইতিমধ্যেই ১০২টি দেশ ঘুরেছেন। একাধিকবার ঘুরেছেন থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দুবাই, ফ্রান্স, ইটালি, জার্মানী, আমেরিকা, স্পেন প্রভৃতি। জীবনের লক্ষ্য, বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ ঘোরা।

অনেক ভূপর্যটকের মতো উনিও জীবন দিয়ে অনুভব করেছেন, ইউরোপ মহাদেশ ঈশ্বরের অতিরিক্ত কৃপাদৃষ্টি লাভ করেছে। ওখানে বেড়াতে যাওয়ার আনন্দই আলাদা। সেই আনন্দধারা বহন করে বর্তমানে পৌঁছে গিয়েছেন ৬৭ বছরে। ইউটিউবে 'Small Planet' বলে একটি চ্যানেল খুলেছেন (লিঙ্কঃ https://youtube.com/@SmallPlanet.?si=N8j4990XAmrYvII1)। এছাড়াও ওঁনার একটি ফেসবুক একাউন্টও আছে (লিঙ্কঃ facebook.com/profile.php?id=100093279356678)।

উদ্দেশ্য, এই চ্যানেলের দর্শক ও শ্রোতাদের বিভিন্ন দেশ ভ্রমনের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দেওয়া। কোন দেশকে প্রাধান্য দিয়ে আগে পরিভ্রমন করা উচিত, সেই বিষয়ে বিশদে ব্যাখ্যা করা। তাই এখন চ্যানেলের প্রয়োজনে নতুন করে ভিডিওগ্রাফি করার জন্য, ঘুরে যাওয়া দেশগুলোতে আবার নতুন করে ঘুরতে হচ্ছে। এছাড়া তালিকায় ৩০/৩২ দেশ বাকি আছে, যা এখনও ঘোরা হয়নি। ৬৭ বছর বয়সে নতুন করে বিশ্বভ্রমনের অদম্য ইচ্ছাকে কুর্ণিশ জানাতেই হয়। সল্টলেকবাসী হিসাবে আমরাও গর্বিত।

লেখাটা এখানে শেষ করতে পারলেই ভালো হতো, কিন্তু তা তো হবার নয়। ওঁনার অন্য নেশাও আছে, তারও এমন গভীরতা, উল্লেখ না করলেই নয়। সেটি হচ্ছে দেশ-বিদেশের সিনেমা দেখা। দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে কলকাতা, গোয়া ও ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের চলচ্চিত্র উৎসবে যোগদান করে, মূলত বিদেশি সিনেমা দেখা। এছাড়া কান, ভেনিস, বার্লিন ইত্যাদি চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দিয়ে অসংখ্য বিদেশি সিনেমা দেখেছেন। আজ পর্যন্ত ১৩০টির বেশি দেশের ১,০০০-এর ওপর বিদেশী সিনেমা দেখেছেন। ভাবা যায়!

সদগুরু জাগ্গি বাসুদেব প্রতিষ্ঠিত 'ঈশা ফাউন্ডেশন যোগাকেন্দ্র'র একজন আধিকারিক এবং দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানের কোষাধ্যক্ষ পদে নিযুক্তৃ আছেন। ঈশা ফাউন্ডেশনের যোগাকেন্দ্রে মূলত শেখানো হয় 'ইনার ইঞ্জিনিয়ারিং' বা 'চিত্তবৃত্তি নিরোধক যোগ'। এই ফাউন্ডেশনের কলকাতা এবং পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন শাখার কাজকর্ম নিয়মিতভাবে বিশ্বনাথবাবুকে দেখাশোনা করতে হয়।

একটা মানুষ চাইলে এক জীবনে কত কী করতে পারেন, তার উজ্জ্বল উদাহরণ আমাদের প্রতিবেশী বিশ্বনাথ পাল। সদগুরুর সান্নিধ্য, নিরামিষ আহার, চিত্তবৃত্তি নিরোধক যোগসাধন তাঁকে এই বয়স পর্যন্ত ঔষধ বিমুক্ত রাখতে পেরেছে। আজকের দিনে এসব চিন্তা করা যায়!

'সমন্বয়' ওয়েব ম্যাগাজিন বিশ্বনাথবাবুর সুস্থ দীর্ঘ জীবন কামনা করছে, একই সঙ্গে প্রার্থনা করছে ওঁনার সাফল্যের মুকুটে নিত্যনতুন পালক সংযোজিত হয়ে চলুক।


Niagara Falls, New York, USA


River Nile, Aswan, Egypt


Maasai Mara National Reserve, Kenya, Africa


Glacier Bay National Park and Preserve, Alaska, USA


Acropolis, Greece


Whale watching, Gold Coast, Australia


Keukenhof, Lisse, Netherland


Koh Nang Yuan, Thailand


Chamonix, France


  • জন্মদিনে কিছু কথা

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ যে বছরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ হয়, সেই বছরে অর্থাৎ ১৯৪১ সালে এই পৃথিবীর আলো দেখেন অধ্যাপক ডঃ দিলীপ কুমার চক্রবর্তী। ৩০শে অক্টোবর, ১৯৪১ থেকে ৩০শে অক্টোবর, ২০২৩, সোমবার দিলীপবাবু ৮২ বছর অতিক্রম করে ৮৩ বছরে পড়েন। জন্ম সিঙ্গাপুর। পিতা ডাঃ যোগেশ চন্দ্র চক্রবর্তী ছিলেন আজাদ হিন্দ ফৌজের ষষ্ঠ শল্য চিকিৎসক। হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের পর জাপান আত্মসমর্পণ করলে আজাদ হিন্দ ফৌজের জন্য খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ সম্পূর্ণরূপে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। থাইল্যান্ডের রবারের জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ফৌজের সৈন্যরা কোহিমার পথে অগ্রসর হচ্ছিল। পথে তীব্র খাদ্যাভাবে রাবার গাছের পাতা খেয়ে বাঁচার শেষ চেষ্টা বিফলে যায়। ফলে আজাদ হিন্দ ফৌজের ১৭ হাজার সৈন্য জঙ্গলের পথেই মারা যায়। তাদের মধ্যে শল্য চিকিৎসক যোগেশ চক্রবর্তীও ছিলেন। এই কথা ওঁনার স্ত্রী উর্মিলা চক্রবর্তীকে পত্র মারফত জানান থাইল্যান্ডের তদানীন্তন রাষ্ট্রদূত এপ্লাশিয়া পিশে।

পিতৃদেব আজাদ হিন্দ বাহিনীর শল্য চিকিৎসক জানার পরে ভারত মহাসভার সহায়তায় ও মাসিক ৩০০ টাকা অনুদানের সাহায্যে ৫ মেয়ে ও ১ ছেলে নিয়ে উর্মিলা দেবী কোলকাতা ছেড়ে আদি বাসস্থান চট্টগ্রামে চলে যান। সেখানের মাদ্রাসা বিদ্যালয়ে দিলীপবাবু প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়েন। প্রধান শিক্ষকের ছিলেন হান্ডু মিঞা। ১৯৪৯ সালে চট্টগ্রামে আবার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হওয়ায় উর্মিলা দেবী সন্তানদের নিয়ে শিয়ালদহ স্টেশনের ৪ নং প্ল্যাটফর্মে আশ্রয় নেন। মুম্বাইয়ের ওয়াডালা হাসপাতালের মেট্রন দিদি রেণুকা চক্রবর্তী দিলীপবাবুকে মুম্বাইয়ে নিয়ে সেন্ট মেরিস স্কুলে ভর্তি করে দেন। দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়ে জামাইবাবু সুবোধ রঞ্জন ঘোষের সঙ্গে এডেনে গিয়ে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়েন। মুম্বাইয়ে ফিরে এসে যখন জানলেন, মা ও ছোট বোন উত্তরপাড়া উদ্বাস্তু শিবিরে আছেন, তখন কোলকাতায় ফিরে এসে অভেদানন্দ বালক আশ্রমে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। সে সময়ে বই বাঁধাইয়ের দোকানে দপ্তরির কাজও করতে হয়েছে। তারপর হাবড়ার কল্যানগড় বিদ্যামন্দির থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। স্কুলে তিনি কোনোদিনও দ্বিতীয় হননি।

যাদবপুর উদ্বাস্তু কলোনীতে জ্ঞাতি মামার কাছে আশ্রিত থেকে প্রাণিবিদ্যায় আমহার্ষ্ট স্ট্রীট সিটি কলেজে ভর্তি হন। প্রাণিবিদ্যার বিভাগীয় প্রধান নীরজ মোহন বসুর অত্যন্ত প্রিয় ছাত্র ছিলেন। স্নাতকস্তরে প্রথম হয়ে বালিগঞ্জ বিজ্ঞান কলেজে ভর্তি হন। ছেলেদের মধ্যে প্রথম হয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর পতঙ্গ বিদ্যায় গবেষণা করে পিএইচডি প্রাপ্ত হন।

প্রথম শিক্ষকতা উড়িষ্যার ভদ্রক কলেজে। অবসর প্রেসিডেন্সী কলেজের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে। এর মাঝে ছিল তিন জন ছাত্র-ছাত্রীর গাইড হয়ে পিএইচডি ডিগ্রি লাভে সাহায্য করা ও ৭০টির বেশি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশ করা। এজন্য তিনি 'ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেস' থেকে পুরস্কৃত হয়েছেন।

মায়ের অনুরোধে জামাইবাবু বেণীমাধব চক্রবর্তীর উদ্যোগে বেলঘরিয়া নিবাসী শেফালী ঘটকের সঙ্গে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন। বিদূষী ও বিশিষ্ট কবি শেফালী দেবী মোট ৩৮টি কবিতার বই প্রকাশ করেন। এছাড়া শিশুদের জন্য কবিতা ও ছড়ার ষান্মাসিক পত্রিকা 'টুং টাং' প্রকাশ করেন। শেফালীদেবীর প্রয়াণের পর দিলীপবাবু প্রধান সম্পাদক হিসেবে এই পত্রিকার দায়িত্ব নেন। দিলীপবাবু নিজেও একজন প্রতিথযশা কবি। শিশু সাহিত্যিক হিসেবে প্রণব মুখার্জির হাত থেকে 'রাষ্ট্রপতি পুরস্কার' গ্রহণ করেন। 'বিশ্ববাংলা কবি সম্মেলন'-এ নরওয়ের অসলো থেকে বিশেষ সম্মান লাভ করেন। তিনি মোট ১৮টি কবিতার বই প্রকাশ করেছেন, তার মধ্যে ইংরেজিতে 'ডায়মন্ড রিং', হিন্দিতে 'আও দিয়া জ্বালায়ে' ও উর্দুতে 'শবনম' উল্লেখযোগ্য। সমাজসেবা ও সাহিত্য সেবায় এখনও নিরলসভাবে যুক্ত আছেন। উনি মাতাজী নির্মলা দেবীর কাছে দীক্ষিত ও একজন সহজযোগী।

'করুণাময়ী সমন্বয় সমিতি' তাঁর আজীবন সদস্য অধ্যাপক ডঃ দিলীপ কুমার চক্রবর্তীর শুভ জন্মদিনে প্রার্থনা করছে - তাঁর সুস্থ, দীর্ঘ জীবন এবং অনলসভাবে সমাজসেবা ও সারস্বত সাধনায় জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি মগ্ন থাকুন।


'রাষ্ট্রপতি পদক' ভূষিত অধ্যাপক ডঃ দিলীপ কুমার চক্রবর্তী।


'রাষ্ট্রপতি পদক' লাভের পরে মাননীয় রাষ্ট্রপতি শ্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়-এর সাথে ডঃ দিলীপ কুমার চক্রবর্তী।


'নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু স্বর্ণপদক সম্মাননা', আন্তর্জাতিক সার্ক কালচারাল সম্মেলন (২০১৪)।


২০১৫ সালে নরওয়েতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক বঙ্গসাহিত্য সম্মেলন-এ বিশিষ্টদের সাথে ডঃ দিলীপ কুমার চক্রবর্তী (বামদিক থেকে দ্বিতীয়)।
(১৫ নভেম্বর, ২০১৫, রবিবার 'দৈনিক স্টেটসম্যান'-এ প্রকাশিত ছবি।)


  • প্রবীনতম নাগরিক দেবেন্দ্রনাথ সান্যালের প্রয়াণ

 

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ গলিত কাঞ্চনবর্ণ, সৌম্যদর্শন, সদা হাস্যমুখ, বন্ধুবৎসল, প্রতিবেশীদের অতি প্রিয়, করুণাময়ী 'জি' ব্লকের প্রবীণতম অধিবাসী দেবেন্দ্রনাথ সান্যাল ১৯শে অক্টোবর, বৃহস্পতিবার, দ্বিপ্রহর ২-১০ মিনিটে ৯৮ বছর বয়সে সজ্ঞানে প্রয়াত হন।

দেবেন্দ্রনাথ সান্যাল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ দেখেছেন, ব্ল্যাক-আউট, সাইরেনের শব্দে অভ্যস্ত মানুষটি কোলকাতার ওপর জাপানিদের ফেলা দুটি বোমার একটি হাতিবাগান বাজারে, অন্যটি নিজের জন্মভিটে ৪১ নং শিকদার বাগান স্ট্রীটে পড়তে দেখেছেন। সুতীব্র শব্দ, আগুনের ঝলকানির মধ্যে নিমেষে বসতবাড়ির অর্ধেক অংশ ধূলিসাৎ হতে দেখেছেন। প্রতিবেশী চিকিৎসক, বিজ্ঞানী উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী, যিনি কালাজ্বরের প্রতিষেধক আবিষ্কার করেন, তিনি পরদিন সকালে এসে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বোমার খোল নিয়ে যান।

১৯৪২-এর 'ইংরেজ ভারত ছাড়ো' আন্দোলনে দেবেনবাবু সক্রিয়ভাবে যোগদান করেন। এই আন্দোলনে তাঁর অন্যতম সহযোদ্ধা রামেশ্বর মুখার্জিকে কলেজ স্ট্রীটে পুলিশের গুলিতে নিহত হতে দেখেছিলেন। তিনি চাক্ষুষ করেছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু ও মহাত্মা গান্ধীকে। দেশবন্ধু পার্কে মহাত্মা গান্ধীর বক্তব্য শুনেছেন। তিনি বাংলার বুকে '৪৩-এর ভয়াবহ মন্বন্তর দেখেছেন, দেখেছেন মৃত্যুমিছিল। স্বাধীনতা দেখেছেন, দেখেছেন দেশভাগ, বীভৎস দাঙ্গা। কলেজ স্ট্রিট, বিধান সরণীতে সার সার মৃতদেহ দেখেছেন, দেখেছেন শকুনদের আনাগোনা। আর দেখেছেন নিঃস্ব, ছিন্নমূল উদ্বাস্তুদের জনস্রোত। আদতে উনি আমাদের কাছে ছিলেন স্বাধীনতা পূর্ব ইতিহাসের এক খন্ডচিত্র।

ছাত্রজীবন শৈলেন্দ্র সরকার বিদ্যালয়, পরে বিদ্যাসাগর কলেজ। স্নাতক হওয়ার পরেই বিধান চন্দ্র রায়ের দপ্তর 'স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন'-এ যোগদান। সায়েন্টিফিক অফিসার হিসেবে পাস্তুর ইনস্টিটিউট থেকে ১৯৮৩ সালে ৫৮ বছর বয়সে অবসর গ্রহণ করেন।

প্রখ্যাত পঞ্জিকা হাউস পি. এম. বাগচী পরিবারের মেয়ে লীনার সঙ্গে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন। পৈতৃক বাসভবন ছেড়ে ১৯৮৪ সালে করুণাময়ী 'জি' ব্লকের ১৪/৭ ফ্ল্যাটে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন, আমৃত্যু এই বাড়িতেই ছিলেন। ২০১৪ সালে সহধর্মিনী লীনাদেবী প্রয়াত হন।

দেবেনবাবুর দুটি বিশেষ নেশা ছিল। মুদ্রা সংগ্রহ ও ফটোগ্রাফি। আর ছিল শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রতি সুতীব্র আকর্ষণ। নিজেও ভালো বেহালা বাজাতেন। প্রকৃত ভদ্রলোক বলে যদি কোনো সংজ্ঞা থাকে, তার নাম দেবেন্দ্রনাথ সান্যাল। ১৯৮৮ সালে একবার সমস্ত ইউরোপ পরিভ্রমন করেন। মিষ্টভাষী, আত্মীয়, বন্ধু, অতিথিবৎসল এই মানুষটি যে শূন্যতা রেখে গেছেন, তা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। তিনি রেখে গেছেন সুযোগ্য পুত্র ডাঃ তৃণাঞ্জন সান্যাল, পুত্রবধূ অপরাজিতা সান্যাল ও পৌত্রী ত্রিজিতা সান্যালকে।

'করুণাময়ী সমন্বয় সমিতি' পরিবারের সকল সদস্যদের যে অপূরণীয় ক্ষতি হলো, তার প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছে ও দেবেনবাবুর বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করছে।