স্থানীয় খবর
-
পরিবেশ সচেতনতায় লেখিকা ও সমাজসেবী মমতা বিশ্বাস
পৃথিবী একটুও ভালো নেই। কী করে থাকবে? মানুষের সীমাহীন লোভের থাবা সুন্দর এই পৃথিবীকে ন্যুব্জ করে দিয়েছে। পরিবেশবিদের সাবধানবাণী তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে প্রতিনিয়ত আমরা দূষিত করে চলেছি জল, মাটি, বাতাস। ফলস্বরূপ রোগ ব্যাধির আক্রমণে অসুস্থ পৃথিবীতে অসুস্থ মানুষের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান ও মৃত্যুমিছিলের লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। শিল্পায়ন ও নগরায়নের জন্য আমরা নির্বিচারে ধ্বংস করে চলেছি সবুজ অরণ্য। মানব সভ্যতার উন্নয়নে বৃক্ষছেদনের পরিবর্তে বৃক্ষরোপনের উদ্যোগহীনতা বসুন্ধরাকে বেআব্রু করে পৃথিবীকে করে তুলেছে ঊষর। বৃক্ষছেদনের বিধিনিষেধকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কাঠ মাফিয়ারা রাতের অন্ধকারে অরণ্যের পর অরণ্য ধ্বংস করে কাঠ পাচার করে দিচ্ছে। বৃক্ষনিধন চলছে পাহাড়, মালভূমি, সমভূমিতে নানা অছিলায়। পাহাড়ে ধ্বস নামছে। ভবিষৎ প্রজন্ম কোন পৃথিবীতে বাস করবে?
শিল্পায়ন, নগরায়ন ও জনসংখ্যার বৃদ্ধির ফলে চাষের জমি কমে গেছে। কম জমিতে অধিক ফলনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ওষুধ। এর ফলে জমির উর্বরতা কমছে, বাড়ছে মৃত্তিকা দূষণ ও জলদূষণ। জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে শিল্পজাত পণ্য উৎপাদন এবং পরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমে অনর্গল কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন-মনোক্সাইড, মিথেন, ক্লোরো ফ্লুরো কার্বনের মত বিষাক্ত গ্রিনহাউজ গ্যাসে ভরে উঠছে বায়ুমণ্ডল। ভূগর্ভে ও সমুদ্রতলে পারমানবিক বোমা ফাটিয়ে জল ও মাটিকে করে তুলছি দূষিত। সমুদ্রে তেলবাহী জাহাজের তেল সমুদ্রে মিশে শুধুমাত্র সামুদ্রিক উদ্ভিদ, প্রাণীই নয় তাদের উপর নির্ভরশীল পশুপাখিদের মৃত্যু মানুষকে আর বিচলিত করে না। সমুদ্র, নদী, জলাশয়ে অশোধিত রাসায়নিক বর্জ্য মিশিয়ে বাস্তুতন্ত্রকে করে তুলেছি দূষিত।
বাঁধালের বাঁধনে কত নদী হারিয়ে গেছে, যাচ্ছে। খালবিল গেছে শুকিয়ে। নদীর বুক আর পাড় থেকে বালি আর মাটি বেহিসাবি উত্তোলনের ফলে নদী তার স্বাভাবিক গতিপথ হারিয়ে, নিজেই হারিয়ে গেছে। সেই সঙ্গে ভাঙনের সমস্যায় ভিটে- মাটি হারা হাজার হাজার মানুষ।
বর্তমানে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হচ্ছে প্লাস্টিক দূষণ। পঞ্চাশ মাইক্রনের নীচে প্লাস্টিক ব্যবহারের উপর সরকারি বিধিনিষেধ থাকলেও মানুষের অসচেতনতায় পরিবেশ দূষণ ক্রমবর্ধমান। শহরে ও গ্রামে, বিশেষ করে শহরে ড্রেনেজ ব্যবস্থা অচল হয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত করে তুলছে। প্লাস্টিক পচনশীল নয় বলে কৃষিজমিকে করে তুলছে বন্ধ্যা। খাবার ভেবে প্লাস্টিক খেয়ে মারা যাচ্ছে সামুদ্রিক প্রাণী, শুধু তাই নয় ফাঁসে আটকে মারা পড়ছে। বাড়ছে চর্মরোগ। প্লাস্টিক ব্যবহারের রাশ টেনে না ধরলে সামুদ্রিক প্রাণীর সমপরিমাণ প্লাস্টিক সমুদ্র গর্ভে জমবে। ফলে জল-স্থলের প্রাণীকুলের গভীর সংকটকাল আসন্ন।
করোনা মহামারীর কারণে লকডাউন শুরু হওয়ায় সমগ্র বিশ্ব স্তব্ধ হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে সমাজের জন্য, পরিবেশের জন্য কিছু করার তাগিদ সকলের অনুভব করা উচিত।
সেইসময় লেখিকা মমতা বিশ্বাসের গ্রামের বাড়ি যাওয়ার প্রধান সড়ক সম্প্রসারণের জন্য ছোটো-বড়ো, এমনকি দুশো/আড়াইশো বছরের গাছ কাটা শুরু হয়। যা তাঁকে খুব ব্যথিত করে। প্রথম সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ১০০টি বট-অশ্বত্থ গাছ লাগাবেন ২৬ কিলোমিটার রাস্তার দুই ধারে। গাছ লাগিয়ে বড়ো করে তোলার কাজটি খুব কঠিন ছিল। সহজে উপড়ে ফেলা যায়। গরু-ছাগলে খেয়ে ফেলে। সিদ্ধান্ত পাল্টাতে হয়।
কুলগাছি-ঝাউতলার মধ্যবর্তী ফাঁকা মাঠের দুই কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশে ফল ও ফুলের গাছ লাগানো জন্য নির্বাচন করা হয়। স্থানীয় মানুষদের সহায়তায় তিনবছরে আড়াইশ গাছ লাগানো হয়েছে। সাঁওতাল পল্লির ছেলে-মেয়েদের খুব সহযোগিতা পেয়েছেন। বীজ ছড়ানো হয়েছে কুল, মেহগনির। বর্তমানে পঞ্চাশটি গাছ আছে। বাড়িতে তৈরি চারা যেমন আছে, তেমনি কেনাও হয়েছে। চারা তৈরি করেছেন প্লাটিকের প্যাকেট ও ক্যারিব্যাগে, মানে প্লাটিকের পুণর্ব্যবহার। উপহার হিসেবে চারাগাছ তুলে দিয়েছেন অনেক ব্যক্তির হাতে। বালেশ্বর থেকে আগত বাঘাযতীন স্মৃতিরক্ষা কমিটির ১৫ জন ব্যক্তির হাতে তুলে দেওয়া চারা ছিল তাঁর ছাদবাগানের।
মমতা বিশ্বাসের বিদ্যালয়ের ছাত্ররাও রাস্তার ধারে গাছ লাগিয়ে পরিচর্যা করছে তাঁর নিরন্তর উৎসাহে। গাছের তালিকায় রয়েছে আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা, আমড়া, তেঁতুল, বকুল, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, অশোক, ছাতিম, দেবদারু, আকাশমণি, অমলতাস, বট, অশ্বত্থ, চটকা, স্বর্ণচাপা ইত্যাদি। বর্তমানে কৃষ্ণনগর পরিবেশ বন্ধু সংগঠনের বৃক্ষরোপন কর্মসূচির সঙ্গে অনলস ভাবে যুক্ত আছেন। ভবিষ্যতেও এই ধরণের সমাজসেবামূলক উদ্যোগে অবিরত যুক্ত থাকবেন, সেটাই তাঁর অন্যতম জীবন দর্শন।
-
'শিল্পীমন' আয়োজিত সম্মেলক আবৃত্তির অনুষ্ঠান
দক্ষিণ কলকাতার ব্যতিক্রমী সাংস্কৃতিক সংগঠক শিল্পীমন আয়োজিত 'সম্মেলক আবৃত্তি'র ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানটি শিল্পীমন বাড়িতে বিগত ৯ই ডিসেম্বর, শনিবার সাড়ম্বরে অনুষ্ঠিত হলো। প্রথা অনুযায়ী অধ্যাপিকা ঋক রায় সূচনা সঙ্গীতে দু'খানি 'কবিতার গান' পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি প্রথমেই একটি অন্য মাত্রায় পৌঁছে দেন।
উপস্থিত ছিলেন শিল্পীমনের প্রধান দুই উপদেষ্টা বিশিষ্ট কবি কমল দে সিকদার এবং গবেষক, প্রাবন্ধিক ও উপন্যাসিক পার্থ সারথি গায়েন। তাঁদের দুজনের বক্তব্যেই প্রকাশ পায় শিল্পীমনের দীর্ঘ ১৩ বছরের যাত্রা কাহিনী। কমল দে সিকদার বলেন শিল্পীমন যে শুধু সাংস্কৃতি চর্চা করে তা নয়, তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে শিল্পীমন প্রতি বছরই দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ায়। আবার পার্থসারথি গায়েন মহাশয় উদাহরণ দিয়ে বলেন, পৌরাণিক কাল থেকেই আবৃত্তির প্রচলন ছিল আর বর্তমানে তো কবিতার আবৃত্তি চর্চার দ্রুত ব্যাপ্তি ঘটেছে।
আজকের এই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি, বাংলাদেশের বাংলা একাডেমির পরিচালক ও বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদের সম্পাদক ড.শাহাদাৎ হোসেন নিপুকে সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে ভারত - বাংলাদেশের মৈত্রীর কথা, স্বাধীনতার পূর্বে পাকিস্থানের বাংলাদেশিদের প্রতি অত্যাচারের কথা, একাত্তরের বাংলা ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার প্রাপ্তির কথা। আজ এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির আসন অলঙ্কৃত করেন নাট্যব্যক্তিত্ব ও বিশিষ্ট বাচিকশিল্পী শ্রী সত্যপ্রিয় সরকার। শিল্পীমনের পক্ষ থেকে তাঁকে সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। আর আজকের অনুষ্ঠানে সম্বর্ধনা প্রদান করা হয় সাংস্কৃতিক সংগঠক ও বাচিক শিল্পী শ্রী ডালিম কুমার চক্রবর্তী মহাশয়কে।
শিল্পীমনের পক্ষ থেকে সকলের হাতে সম্মাননা তুলে দেন দুই উপদেষ্টা কবি কমল দে সিকদার, উপন্যাসিক ও গবেষক পার্থসারথি গায়েন, শিল্পীমনের সম্পাদক কবি কেতকীপ্রসাদ রায় এবং আন্তর্জাতিক তীরন্দাজ, আন্তর্জাতিক কোচ ও সাইয়ের চিপ কোচ শ্রীমতী রুমা রায়।
শ্রী সত্যপ্রিয় সরকার মহাশয়ের মনোমুগ্ধকর আর অসামান্য উপস্থাপনা সকল দর্শককে মুগ্ধ করে দেয়। শ্রী ডালিম কুমার চক্রবর্তী ও শ্রীমতী রমা চক্রবর্তী পরিচালিত গড়িয়া আবৃত্তি অঙ্গন দু'খানি কবিতা কোলাজ পরিবেশন করেন। তারমধ্যে শিশু শিল্পীদের পরিবেশিত কোলাজটি বেশ মজাদার ও উপভোগ্য। যথেষ্ট পারদর্শিতার সঙ্গে পরিবেশন করেন নন্দিনী লাহা পরিচালিত রক্তকরবী কবিতা কোলাজ, বিশেষ করে কবি কেতকীপ্রসাদ রায়ের ঈশ্বর ভাবনার উপর কোলাজটি। আবার রুমকি ভট্টাচার্য পরিচালিত যাদবপুর কথাছন্দর কবিতা কোলাজটি বেশ মনোগ্রাহী ছিল। অন্যদিকে সঞ্জনা শীল পরিচালিত নতুন দিশারী আর্ট এন্ড কালচারের কবিতা কোলাজটি অসাধারণ পরিবেশন ছিল। আর চন্দ্রিকা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত কবিতা কোলাজটিও সকলের মন ছুঁয়ে যায়।
কবিতা পাঠ করেন কবি কমল দে সিকদার, কেতকীপ্রসাদ রায়, পার্থসারথি গায়েন এবং আলোক চন্দ্র। অনুষ্ঠানে আবারও মনোমুগ্ধকর তিনখানি 'কবিতার গান' পরিবেশন করেন অধ্যাপিকা ঋক রায়। তাঁর গানের নির্বাচন ছিল একদম আজকের অনুষ্ঠানের উপযোগী। তাঁর গান নির্বাচন আর মনে রাখার মতো গায়কী ছিল আজকের অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ।
সঞ্চালনা যে একটি অনুষ্ঠানকে কতটা সার্বিকভাবে সুন্দর করে তুলতে পারে, তার দক্ষতা সঞ্চালিকা নন্দিনী লাহা বার বার জানিয়েছেন তার সুচারু আর সুন্দর শব্দ চয়নে, যা অনুষ্ঠানটিকে সর্বাঙ্গ সুন্দর করে তোলে।
(সংগৃহীত সংবাদ)
সংবাদদাতা - রূপায়ণ চৌধুরীঃ অদ্বৈতচার্য্য, মহাপ্রভু, বিজয়কৃষ্ণের পূত পবিত্র পদচিহ্নধন্য শ্রীধাম শান্তিপুরে বৈষ্ণব ও শাক্তের মহামিলনে কার্তিকী পূর্ণিমায় তিনদিনের রাসোৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। বারোটি গোস্বামী বিগ্রহ বাড়ি তাদের ইষ্টদেবতা কষ্টি পাথরের রাধাকৃষ্ণ মূর্তিকে প্রথম ও দ্বিতীয় রাসে তাদের সুসজ্জিত রাসমঞ্চে দর্শনার্থীদের জন্য মধ্যরাত পর্যন্ত অবস্থান করান। লক্ষ লক্ষ দর্শনার্থী এই অপরূপ দৃশ্য দর্শন করেন। বছরে এই দু'দিনই মাত্র রাসমঞ্চে দেবী অধিষ্ঠিত হন।
তৃতীয় দিন ঐতিহাসিক ভাঙ্গারাস। চলতি সময়ে, চলতি কথায় কার্নিভাল।
সন্ধ্যে থেকে সারারাত ডিম্বাকার শোভাযাত্রায় বিগ্রহ ও সার্বজনীন পূজা কমিটি নানা ধরণের ট্যাবলো নিয়ে শহর পরিক্রমা করে। নান্দনিক বৈচিত্র্যময় এই ভাঙ্গারাস নয়ন ভরে পরখ করবার মতন। একাধারে বিগ্রহবাড়ী রামায়ণ মহাভারতের দৃশ্যাবলীকে ট্যাবলোর মাধ্যমে যেমন তুলে ধরেন, ঠিক অপরদিকে সার্বজনীন পূজা কমিটি তাদের শোভাযাত্রায় বর্তমান সময়ের নানা জনসচেতনতামূলক ঘটনাকে আলো, শব্দ, নৃত্য ও বাজনার মাধ্যমে তুলে ধরেন। অর্থাৎ এই ভাঙ্গারাস একই অঙ্গে একাধিক রূপ।
আরও একটি বিশেষত্ব ভাঙ্গারাস শোভাযাত্রায় রাইরাজা। ১৩ বছরের নিচে ব্রাহ্মণ বাড়ির কুমারী মেয়েকে একদিনের রাজা হিসাবে সুসজ্জিত হাওদায় বসিয়ে বিগ্রহ মূর্তির সম্মুখে করে শহর পরিক্রমা করানো হয়। এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য।
শান্তিপুর তথা নদিয়া জেলার অন্যতম প্রাচীন সংস্থা 'শান্তিপুর পূর্ণিমা মিলনী' প্রতিবারের ন্যায় এবারও এই উৎসব বিশ্ব দরবারে আরও উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর করতে 'রাসশ্রেষ্ঠ সম্মান' প্রদান করেন।
শ্রেষ্ঠ প্রতিমা, শ্রেষ্ঠ প্যান্ডেল, শ্রেষ্ঠ রাইরাজা, শ্রেষ্ঠ শোভাযাত্রা। এছাড়াও বিশেষ সম্মান আদিবাসী নৃত্যদল, মৃৎশিল্পী ও ডেকরেটরকে প্রদান করা হয়। এবারের পূজা পরিক্রমায় উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র শিল্পী 'একটু সরে বসুন' সিনেমার নায়িকা ইশিতা দাস।
ভাঙ্গারাসের পরদিন লাইব্রেরি মাঠে এক বিশেষ অনুষ্ঠানে প্রাপকদের হাতে সুসজ্জিত স্মারক ও চেক তুলে দেন SDO, BDO, District I&C Officer, MLA, Chairman প্রমুখ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সুন্দরভাবে সংযোজনা করেন সংস্থার সম্পাদক ও মূকাভিনয় শিল্পী রূপায়ণ চৌধুরী।
-
জনতার রায়ে 'সেরা জগদ্ধাত্রী পুজো'র শিরোপা
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ করুণাময়ী 'ইডি' ব্লক আবাসিকবৃন্দ পরিচালিত জগদ্ধাত্রী পূজা এবারে ব্যাপকভাবে আয়োজিত হয়েছে। শুধু বিধাননগর নয়, কোলকাতার মধ্যেও এত বড়মাপের পুজো দৃষ্টিগোচর হয়নি। সেরা প্যান্ডেল, প্যান্ডেলজুড়ে আলোর খেলা, মনে হয় বুর্জখলিফার ছোট সংস্করণ, চোখজুড়ানো সেরা প্রতিমা, সেরা শিল্পীদের নিয়ে চারদিনের মনমাতানো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সাড়ে সাত হাজারের বেশি ভক্তকুলের মধ্যে উৎকৃষ্ট মানের প্রসাদ বিতরণ, এক কথায় এলাহি আয়োজন, যার কোনো জবাব নেই। নেতা থেকে কর্মী সবাই ৯-১০ দিন ধরে ২৪ ঘন্টা তৈলাক্ত মেসিনের মতো নীরবে, নিঃশব্দে কাজ করে গেছে বছরের পর বছর এও এক দেখার বিষয়। চমকে দেওয়ার মতো এতবড় নিরঞ্জন শোভাযাত্রা হল, তা একদিকে যেমন সংগঠিত, তেমনি ছিল সুশৃঙ্খল। এও এক ভাববার বিষয়।
২০১০ সালে প্রথম যখন চারাগাছটি রোপণ করা হয়, তখন পুজোর পক্ষে যত লোক ছিল, পুজোর বিরুদ্ধে তার থেকে অনেক বেশি লোক ছিল। অসুবিধা হয়েছে, কষ্ট হয়েছে, তদানীন্তন বিধায়ক সুজিত বোসের সহযোগিতায় ও মায়ের কৃপায় সব বাধা অতিক্রম করে জোর কদমে এগিয়ে গেছে। দেখতে দেখতে ২০২৩-এ করুণাময়ীর জগদ্ধাত্রী পুজো ১৪তম বর্ষে পদার্পণ করেছে। একটা বিষয় লক্ষণীয় যে, বিরোধী শিবিরের অধিকাংশ লোক শিবির বদল করেছে, বাকিরা আজ মুখ লুকোচ্ছে।
পুজোর সম্পাদক রঞ্জন পোদ্দার আজ হয়তো বরো চেয়ারম্যান ও ৩৪ নং ওয়ার্ডের পৌরপিতা, শুরুর দিনে সে তো ছিল নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের অতি সাধারণ এক সদস্য। সুজিত বোসের সহযোগিতা ও রঞ্জন পোদ্দারের একাগ্রতা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা, পরিশ্রম ও সকলকে নিয়ে চলার মানসিকতা করুণাময়ী 'ইডি' ব্লক আবাসিকবৃন্দ পরিচালিত জগদ্ধাত্রী পুজোকে আজ 'শ্রেষ্ঠ পুজো'র শিরোপা এনে দিয়েছে।
গান্ধীনগর, গুজরাটে অবস্থিত অক্ষরধাম মন্দিরের আদলে মন্ডপ তৈরি হয়েছে। চারটি ডেকরেটর সংস্থার ২৫০ জন কর্মী ১০-১২ দিন উদয়াস্ত পরিশ্রম করে চোখ ধাঁধানো মন্ডপ, সঙ্গীতানুষ্ঠানের সুবিশাল মঞ্চ ও মাঠজুড়ে মেলার আয়োজন করে দিয়েছে। পুজো মন্ডপের ভিতরের অংশ অতি প্রশস্থ, ওপরের ঝাড়বাতি ছিল যেমন অতিকায়, তেমনই চোখ জুড়ানো। প্রতিমা এসেছিল শ্রেষ্ঠ প্রতিমাশিল্পী প্রদীপ রুদ্র পালের স্টুডিও থেকে। জগদ্ধাত্রী প্রতিমা এবারে আড়ে-বহরে যত বড় হয়েছে, মায়ের মুখ ততোধিক সুন্দর হয়েছে। দেখলে চোখ ফেরানো যায় না।
১৯শে নভেম্বর, রবিবার, সন্ধ্যে ৭টায় প্রিয় বিধায়ক ও মাননীয় মন্ত্রী সুজিত বোসের পুণ্য করকমলে প্রতিমার আবরণ উন্মোচন ও ২০২৩ সালের জগদ্ধাত্রী পুজোর শুভসূচনা হয়। সুবিশাল সাংস্কৃতিক মঞ্চে মাননীয় মন্ত্রীর সংক্ষিপ্ত ভাষণের পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রথম দিনের অনুষ্ঠানের গায়ক ছিলেন বর্তমানের সাড়া জাগানো শিল্পী সৌরেন্দ্র ও সৌম্যজিত। দুপুর থেকে ছিল জায়ান্ট স্ক্রিনে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনাল দেখানোর ব্যবস্থা। ক্রিকেট জ্বর অতিক্রম করে সৌরেন্দ্র-সৌম্যজিতের মনমাতানো অনুষ্ঠান চলে রাত দশটা পর্যন্ত। এ ছিল এক নতুন স্বাদ, নতুন ঘরাণার গান।
২০শে নভেম্বর, সোমবার রাত ৮টা থেকে রূপঙ্কর বাগচী নিবেদন করে দু'ঘন্টা ধরে সঙ্গীতের লহরা, মুগ্ধ শ্রোতাদের শিল্পী জানিয়ে দেন, এমন পরিবেশে গান পরিবেশন করার আনন্দই আলাদা। ২১ তারিখ অর্থাৎ জগদ্ধাত্রী পূজার দিন বিভিন্ন ধরণের গানের ডালি নিয়ে উপস্থিত হন ম্যাক ও দেবযানী। ২২ তারিখের অনুষ্ঠানে ছিল জলি, সুজয় ভৌমিক, অলকা ইয়াগনিক এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সাকিল আনসারি। যাকে বলে ঝিন-চ্যাক ধামাকা আর শিল্পীরা ছিলেন এক সে বড়কর এক! প্রতিদিনই মাঠভর্তি দর্শক, শ্রোতা ছিল, কিন্তু শেষদিন মাঠে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। রাস্তাজুড়ে লোকে লোকারণ্য!
জগদ্ধাত্রী পুজোর দিন সকাল ৮টা থেকে পূজার কাজ শুরু হয়। অগনিত ভক্তমন্ডলী পূজামন্ডপে এসে পুজো দেন ও অঞ্জলি প্রদান করেন। দুপুর ১টা থেকে মায়ের প্রসাদ বিতরণ শুরু হয়, চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। প্রায় ৮,০০০ পুণ্যার্থী উৎকৃষ্ট মানের প্রসাদ গ্রহণ করেন। পূজা কমিটির অনুমান আগামী বছরে ১০,০০০ ভক্তের জন্য প্রসাদের আয়োজন রাখতে হবে। রাত ৮টা থেকে ভোগের প্রসাদ বিলি শুরু হয়, রাত ১১টায় সে প্রসাদ দিয়ে শেষ করা যায়নি। ভক্তদের সন্তুষ্টিবিধান এই পুজোর একমাত্র লক্ষ্য।
সম্পাদক রঞ্জন পোদ্দার, সভাপতি উত্তম নাহা রায়, চেয়ারম্যান কেশব পাত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন অসংখ্য মানুষ, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অজয় চক্রবর্তী, দেবোপম সরকার, সঞ্জয় দাস (কালি), বাদল বিশ্বাস, হৃষিকেশ জানা, রাণা হালদার, অঞ্জন পোদ্দার, তপন রায়, সাধন পাল, সুশোভন মুখোপাধ্যায়, সুষমা পোদ্দার, মৌমিতা ব্যানার্জী, সহেলি রায়, দীপু কাপুরিয়া, বৈশালী মান্না, বড়মা, চিরদীপ গুপ্ত, শিবনাথ ঘোষ, শাশ্বতী বন্দোপাধ্যায়, দুষ্মন্ত কেডিয়া, রামানুজ চ্যাটার্জি, আকাশ পান্ডে, সুকুমার মান্না, সুমন জানা, শুদ্ধদেব ব্যানার্জী, সুনীল মজুমদার, দিলীপ রায়, দেবযানী রায়, নিবেদিতা ধর, সুমনা হোড়, রায়া আদিত্য, শিউলি আদিত্য, ভাস্কর সেন, তানিয়া সাহা, চৈতালি দাস, সবিত্রি মুখার্জি, গরিমা সরকার, সুধীন মিত্র এবং বহু দাতা, বিজ্ঞাপনদাতা, প্রযুক্তিবিদ, শিল্পী, কারিগর, সর্বক্ষণের কর্মীবাহিনী একসূত্রে বাঁধা এক ময়দানব যেন কয়েকদিনের জন্য করুণাময়ীর মাঠ দাপিয়ে বেড়িয়ে চলে গেল।
ধামসা মাদলের শব্দে চারিদিক সচকিত, ঢাকি, মহিলা ঢাকি, ব্যান্ড, কীর্তন, আলোকসজ্জা দিয়ে সাজানো চোখ ধাঁধানো সুসজ্জিত বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা যখন করুণাময়ীর অভ্যন্তরে মধ্যরাতে পথ পরিক্রমা করছিল, তখনও মানুষ জেগেছিল এই সুশৃঙ্খল শোভাযাত্রা পরিদর্শন করার জন্য। নিরঞ্জন শোভাযাত্রা যখন করুণাময়ীর ব্লক পরিক্রমা শেষ করল, তখন রাত ১টা। এই পরিক্রমায় মায়ের কাছে একটাই প্রার্থনা ছিল, "মা, তুমি তোমার সন্তানদের ভালো রেখো, আনন্দে রেখো, শান্তিতে রেখো, তাদের সফলতা দাও, আর বাঙালিকে, বাংলাকে নবজাগরণের পথে উত্তরণ ঘটাতে সহায়তা করো।"
-
মহাসমারোহে কবির জন্মদিন পালন
সংবাদদাতা - বিশিষ্ট কবি দীপঙ্কর বিশ্বাসঃ গত ২৭শে নভেম্বর, ২০২৩ সাড়ম্বরে পালিত হল কবি যতীন্দ্রমোহন বাগচীর ১৪৬তম জন্মদিন অনুষ্ঠান। কবির নিজের জন্মভিটে নদিয়ার যমশেরপুর গ্রামেই এই অনুষ্ঠান হয়। এই অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছিল করিমপুরের লিটল ম্যাগাজিন 'দর্পণ... মুখের খোঁজে' ও 'কথাশিল্প'-এর যৌথ উদ্যোগে। যতীন্দ্রমোহন ছিলেন রবীন্দ্র পরবর্তী যুগের স্বনামধন্য কবি। 'কাজলা দিদি' কবির বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ। 'বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই' কবির নিজস্ব গানটি দিয়েই অনুষ্ঠান শুরু করে 'চারুকলা' গোষ্ঠীর শিল্পীরা। ভাবগম্ভীর পরিবেশে নানা অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে কবির জন্মদিনটি পালিত হল। অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন পত্রিকার সম্পাদক তথা বিশিষ্ট কবি দেবজ্যোতি কর্মকার। তিনি বলেন, যতীন্দ্রমোহন বাগচী আমাদের ঘরের কবি। আমরা প্রতি বছর এই দিনটি পালন করে আসছি। এবার কবির নিজের বাড়িতেই জন্মদিনটি পালন করবার সুযোগ পাওয়ার তাৎপর্যই আলাদা। আমরা চার বছর পর কবির সার্ধশতবর্ষ পালনের প্রস্তুতি নিয়েছি। করিমপুর ১ ও করিমপুর ২ ব্লকের বিভিন্ন স্কুল, ক্লাব ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের হাতে কবির ছবি তুলে দেওয়া শুরু করেছি। ১৫০টি ছবি বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছি এবং আমরা প্রত্যেকের কাছে আবেদন রাখছি যে, তারা যেন এই দিনটি প্রতিবছর পালন করেন।
'কথাশিল্প' সংস্থার বাচিকশিল্পী তথা শিক্ষক প্রীতম ভট্টাচার্য কবির স্মরণে কবিতা পাঠ করেন।
অনুষ্ঠানের মধ্যলগ্নে ঘোষিত হয়, ৫ম বর্ষ 'কবি যতীন্দ্রমোহন বাগচী স্মৃতি পুরস্কার ২০২৩'-এর প্রাপকের নাম। ঘোষনা করেন বিশিষ্ট লেখিকা জিনাত রেহানা ইসলাম। এই বছর এই পুরষ্কার পাচ্ছেন বিশিষ্ট কবি অমৃতা খেটো, তাঁর 'থেরীগাথার অনন্যরা' কাব্যগ্রন্থের জন্য।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক বিমলেন্দু সিংহরায়। যে সমস্ত কবিরা এইদিনের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদের অন্যতম অরু চট্টোপাধ্যায়, সু-ব্রত, অমিত দাস, রাসরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, হামিদুল ইসলাম সেখ, প্রসাদ নন্দী, দীপঙ্কর বিশ্বাস, গৌতম সাহা, সন্তু প্রামাণিক, বিশিষ্ট লেখক দীপক সাহা, কবি ও বাচিকশিল্পী অমল কুমার সাহা, শিশু বাচিকশিল্পী শুভেচ্ছা স্বর্ণকার সহ বিভিন্ন স্থানীয় পত্রিকার কবি ও সদস্যরা।
কবির সার্ধশতবর্ষ সুচারুভাবে পালনের যে অঙ্গীকার সভায় গ্রহণ করা হয়, উপস্থিত কবি, লেখকেরা তাতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে অনুষ্ঠানটিকে সর্বাঙ্গীনভাবে সফল করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান।
-
নজরুল মঞ্চ গড়ার পথে এক ধাপ
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ সারা বাংলা নজরুল মঞ্চ - বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা নজরুল চর্চাকারী সংগঠন ও অনুরাগী ব্যক্তিবর্গের সমবেত উদ্যোগে এরকম একটা সংগঠন বা মঞ্চ গড়ে তোলা যায় কিনা তা নিয়ে দুইঘন্টা ব্যাপী টানটান একটি আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়ে গেল গ্রেস কটেজে, আজ ২৭ নভেম্বর, ২০২৩ বিকেল ৩-০০ টায়।
'সুজন পাঠাগার ও নজরুল গবেষণা কেন্দ্র'-র সভাপতি দীপংকর দাসের পৌরোহিত্যে আলোচনা সভা আরম্ভ হয়। শুরুতে কবির আবক্ষ মূর্তিতে মাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন বাংলাদেশের 'বাঁশরী' সংস্থার ভারতীয় শাখার সভাপতি দীপা দাস। প্রতিকৃতিতে মাল্য অর্পণ করেন প্রবীণ সুজন দেবাশীষ মন্ডল।
প্রারম্ভে দীপংকর দাসের নেতৃত্বে সমবেত কন্ঠে গীত হয় 'কারার ঐ লৌহকবাট' গানটি। উপস্থিত প্রায় সকলেই কণ্ঠ মিলিয়েছেন। এর পরে কাজী নজরুল ইসলামের সৃষ্টির মর্যাদাপূর্ণ সংরক্ষণ, চর্চা এবং তার আদর্শের যথাযথ প্রসারের উদ্দেশ্যে নজরুল অনুরাগী ও সমমনস্ক সংগঠন গুলির সমবেত একটা মঞ্চ গঠন করার পক্ষে মতপ্রকাশ করে আহ্বায়ক সংস্থা সহ দূর থেকে আগত অংশগ্রহণকারীগণ বক্তব্য পেশ করেন। সংস্থাগত ভাবে এদিন গ্রেস কটেজে অংশগ্রহণ করেন 'বাঁশরী'র পক্ষে দীপা দাস, কলকাতা 'আত্মজন' এর পক্ষে আব্দুল কাইয়ুম, রঞ্জনা কর্মকার এবং কলকাতা শিব-সরস্বতী নজরুল চর্চা কেন্দ্রের পক্ষে অনিন্দিতা মন্ডল। তাঁরা কবির পরিবারের বর্তমান সদস্যদের নিন্দনীয় দিকগুলি তুলে ধরে সেগুলি নিয়েও ভাবনাচিন্তা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন। কবির সৃষ্টির প্রতি তাঁর পরিবারের উত্তরাধিকারগণই বেশি অমর্যাদা এবং ক্ষতি করে চলেছে। এইরকম মঞ্চ গড়ে তোলার পাশাপাশি সেগুলো নিয়েও সতর্ক থাকতে হবে।
সামাজিক মাধ্যমে খবর দেখে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এসে অংশগ্রহণ করেন হাওড়া থেকে রূপম পোড়েল, আড়ংঘাটা থেকে ফটিক মুখার্জি এবং লালগোলা থেকে 'রঙধনু' পত্রিকার সম্পাদক জয়নুল আবেদীন। তিনি তাঁর রচিত নজরুল সংক্রান্ত তিনটি পুস্তক সভাপতির হাতে তুলে দেন। তাঁরা সবাই এই উদ্যোগকে চালু রেখে এগিয়ে নিয়ে যাবার পক্ষে মতপ্রকাশ করেন।
সুজন পাঠাগারের পক্ষ থেকে সম্পদনারায়ণ ধর, দেবাশীষ মন্ডল, রবি বিশ্বাস, দীপাঞ্জন দে, কমল কুমার মন্ডল প্রমুখ বক্তব্য পেশ করে জোরালো ভাবে এই উদ্যোগ চালিয়ে নিয়ে যাবার জন্য সবার কাছে অনুরোধ জানান। প্রয়োজনে গ্রেস কটেজকে কেন্দ্র বা ঠিকানা করেই এই উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে বলে তাঁরা মতপ্রকাশ করেন। সঞ্চালক হিসেবে সম্পাদক ইনাস উদ্দীন বিভিন্ন সংস্থা ও বিশিষ্ট জন, এই আলোচনা সভার প্রতি সমর্থন জানিয়ে শুভেচ্ছা পাঠিয়েছেন তাঁদের বার্তাগুলি পাঠ করে শোনান। এরকম মঞ্চের প্রয়োজনীয়তা আছে এবং এই লক্ষ্যে সম্ভাব্য সবরকম উদ্যোগে সঙ্গে থাকার ইচ্ছা এবং সম্মতি জানিয়েছেন বারাসাত নজরুল চর্চাকেন্দ্রের সভাপতি শেখ কামাল উদ্দীন, চুরুলিয়া দোলনচাঁপার সভাপতি সোনালী কাজী, বহরমপুর নজরুল কমিটির সভাপতি আবুল হাসনাত, কলকাতা অগ্নিবীণা নজরুল চর্চাকেন্দ্রের কর্ণধার রাজর্ষি রায়, বহরমপুর সূর্যসেনার সভাপতি নির্মল সরকার, হরিহরপাড়া নজরুলতীর্থ প্রকাশনার সভাপতি মদন সরকার, লালগোলা রামনগর নজরুল একাডেমির সম্পাদক ইউসুফ আলি, ছায়ানট কলকাতার কর্ণধার সোমঋতা মল্লিক, ছায়ানট কোচবিহারের সম্পাদক আজিজুল হক, আলিয়া সংস্কৃতি সংসদের সম্পাদক সাইফুল্লা, কলকাতার বাচিক সংস্থা 'শৃণ্বন্তু'র পক্ষে রতন কুমার ঘোষ, প্রবীণ নজরুল গবেষক বাঁধন সেনগুপ্ত, নজরুল সাহিত্যের অনুবাদক গিয়াসুদ্দিন দালাল, বিশিষ্ট লেখক হাসমত জালাল, প্রাবন্ধিক আরফান আলি বিশ্বাস প্রমুখ। সামগ্রিকভাবে নজরুল চর্চা প্রসারের লক্ষ্যে দেশে বা বিদেশে বিভিন্ন প্রান্তে নজরুল অনুরাগী সংস্থা গুলির মধ্যে পরিচিতি এবং সংযোগ স্থাপন করই এই মঞ্চ গঠনের মুখ্য উদ্দেশ্য বলে তিনি উল্লেখ করেন। পাশাপাশি তিনি মতপ্রকাশ করেন যে কৃষ্ণনগর অপেক্ষা কলকাতা কেন্দ্রিক সংস্থা ও বিশিষ্ট জনেরা এই মঞ্চের আগামী উদ্যোগ গ্রহণ করলে সেটা অধিকতর বাস্তবসম্মত হবে।
আলোচনা শেষে সর্বসম্মতিক্রমে নিম্ন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় -
(১) আজকে সূচনা ধরে নিয়ে এই আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে এবং আগ্রহী সংস্থা ও ব্যক্তিবর্গের মতামত গ্রহণ করতে হবে।
(২) চূড়ান্ত বা স্থায়ী একটি মঞ্চ গঠিত হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় আলোচনা সভা আহ্বান করতে হবে।
(৩) পরবর্তী আলোচনা সভা কলকাতায় অনুষ্ঠিত হবে। ইনাস উদ্দীন, দীপা দাস এবং আব্দুল কাইয়ুমকে আহ্বায়কের দায়িত্ব প্রদান করা হলো।
(৪) বর্তমান আগ্রহী সংস্থা ও ব্যক্তিবর্গ সহ উৎসাহী অন্যান্যদেরও উক্ত সভায় অংশগ্রহণ করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে।
আলোচনার পাশাপাশি এদিন সভায় 'রবিহারা' কবিতা আবৃত্তি করেন রঞ্জনা কর্মকার। সমাপ্তিতে সঙ্গীত পরিবেশন করেন অনিন্দিতা মন্ডল, শ্রীপর্ণা রক্ষিত, প্রীতিকণা জোয়ারদার এবং ইনাস উদ্দীন।