-
ভগবতী দেবী বালিকা বিদ্যালয়-এর সরস্বতী পুজো
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ১,০০০-এরও বেশি ছাত্রী সমৃদ্ধ ভগবতী দেবী বালিকা বিদ্যালয় বিধাননগরের প্রথম ২/৩টি স্কুলের অন্যতম। লেখাপড়া, খেলাধূলা, কুইজ, বিতর্ক সভা, আলোচনা সভা, রচনা প্রতিযোগিতা, চিত্রাঙ্কন, শরীরচর্চা, বৃক্ষরোপন, কন্যাশ্রীদের সামাজিক দায়িত্ব পালন প্রভৃতি প্রতিটি বিষয়ে অন্যান্য বিদ্যালয়ের থেকে বহুযোজন এগিয়ে। তাই প্রধান শিক্ষিকার ঘর বহুবিধ পুরস্কারে বোঝাই হয়ে থাকে।
এবার গিয়ে শুনলাম, কারা যেন বিভিন্ন বিদ্যালয়ের মধ্যে আলপনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। বিদ্যালয়ের বৃহৎ প্রাঙ্গনজুড়ে আলপনা। প্যাসেজে আলপনা, প্রতিটি ঘরের সামনে আলপনা, সর্বত্র আলপনা। শুধু ছাদের জলের ট্যাঙ্ক দেখা হয়নি; দেখলে, দেখতে পেতাম, সেখানেও চোখ জুড়ানো আলপনা। একথা বলার একটাই অর্থ, এই বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা যা করে, তা মন-প্রাণ ঢেলে করে।
রুচিশীল মন্ডপসজ্জা, ভারি সুন্দর প্রতিমা, চারিদিকে মেয়েদের হাতের কাজ দিয়ে সাজানো দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ, মনোরম অনুভূতি, যা এই বিদ্যালয়ের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে অতি সঙ্গতিপূর্ণ। অতিথি আপ্যায়ন থেকে প্রসাদ বিতরণ প্রতিটি ক্ষেত্রেই ছিল আন্তরিকতার ছোঁয়া।
বিদ্যালয়ের ছাত্রী, অশিক্ষক কর্মচারী থেকে শিক্ষিকা, প্রধান শিক্ষিকা, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সব যেন এক সুতোয় বাঁধা, একই উদ্দেশ্য, একই লক্ষ্য, একই পণ - যতদিন না ভগবতী দেবী বিদ্যালয় সর্বক্ষেত্রে সেরা বিদ্যালয়ের শিরোপা অর্জন করছে, ততদিন শুধু এগিয়ে চলা, এগিয়ে চলার এই সম্মিলিত লড়াই জারি থাকবে।
পরিশেষে জানাই, 'আনন্দমেলা' আয়োজিত আলপনা আঁকা প্রতিযোগিতায় ভগবতী দেবী বালিকা বিদ্যালয় ইতিমধ্যে প্রথম পুরস্কার পেয়েছে।
-
এসবিআই লাইফ ও সমতা ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগ
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ সমতা কোঅপারেটিভ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড-এর করুণাময়ী শাখায় ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত হল সমতা কোঅপারেটিভ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিঃ এবং এসবিআই লাইফ জীবনবিমার এক মিলিত জনমুখী কর্পোরেট কর্মসূচি। প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়। কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের জীবনবিমার প্রয়োজনীয়তা এবং সচেতনতার বিষয় নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়। তার সঙ্গেই বিভিন্ন সম্মান প্রদান এবং সমতা সম্মান campaign অনুষ্ঠিত হয়। সমতা ব্যাংকের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান শ্রী আশীষ ঘোষ, মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক শ্রী দেবাশীষ ভট্টাচার্য্য, মুখ্য শাখা নির্বাহক শ্রী সমিত মণ্ডল, শ্রী তপন রায়, জ্যোতির্ময় সরকার এবং ব্যাংককর্মী ও বোর্ড সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এসবিআই জীবনবিমার পক্ষ থেকে আঞ্চলিক মুখ্য কার্যনির্বাহক সরফরাজ হামিদি, প্রকাশ মিশ্র এবং আরও অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা যথার্থ অর্থে ফলপ্রসূ হয়। স্থির হয়, সমতা ব্যাংকের কুড়িজন কর্মচারীকে প্রাথমিকভাবে দু'দিন ব্যাপী নিবিড় প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে। পরবর্তীকালে পর্যায়ক্রমে বাকি কর্মচারীদের এই প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে।
জীবনবিমাকে তৃণমূলস্তরের সমস্ত মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলাই এই যৌথ উদ্যোগের আশু উদ্দেশ্য।
-
'অশোকনাথ গৌরীনাথ শাস্ত্রী স্মারক সমিতি'র উদ্যোগে বনভোজন
সংবাদদাতা - ভারতী পালঃ গত ২৮শে জানুয়ারি, ২০২৪, রবিবার, 'অশোকনাথ গৌরীনাথ শাস্ত্রী স্মারক সমিতি'র উদ্যোগে বনভোজনের আয়োজন করা হয়েছিল 'তারাতলা নেচার পার্ক'-এ। মাথাপিছু ধার্য হয়েছিল ৩০০ টাকা। যারা বাসে যাবে তাদের জন্য ধার্য ছিল ৫০০ টাকা।
নির্ধারিত দিনে সকাল ন'টায় সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস ছাড়ল। বাসে খাবারের প্যাকেট দেওয়া হল। তাতে কলা, ডিমসেদ্ধ, মিষ্টি আর একটা করে জয়নগরের মোয়া ছিল।
পিকনিক স্পটে গিয়ে মনটা আনন্দে নেচে উঠল। জায়গাটা সত্যিই খুব সুন্দর। দুপাশে লেক, সবুজ গাছপালায় ঘেরা। নৌকাবিহারের ব্যবস্থা আছে, দোলনাও আছে।
জলখাবার পেতে একটু দেরি হলো কারণ ওখানে পৌঁছনোর পর রান্নার প্রস্তুতি শুরু হলো। জলখাবারে পেলাম লুচি, আলু-ফুলকপির তরকারি, কফি।
জায়গাটা ঘুরে দেখছিলাম। বহু লোক এসেছে পিকনিক করতে।
অনেকে নৌকাবিহারে গেলেন। প্রচুর ছবি তোলা হল। ইতিমধ্যেই চিকেন পকোড়া আর সেকেন্ড রাউন্ডের কফি পাওয়া গেল। আমরা যারা সাহিত্যপ্রেমী তারা গান-গল্প-কবিতায় মেতে উঠলাম।
মধ্যাহ্নভোজ শুরু হতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেল। আজকের মেনু - ভাত, ডাল, আলুভাজা, মাছের মুড়ো দিয়ে বাঁধাকপির ঘন্ট, চিকেন/মাছ, চাটনি আর পাঁপড় ভাজা। জম্পেশ খাওয়াদাওয়ার পর বেশ উপভোগ্য হল শেষ পর্বটা। অস্তায়মান সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা লেকের পাশে বসে গান, কবিতাপাঠ করছি। সঙ্গে গরম কফিতে মৃদু চুমুক।
সমিতির সম্পাদক বিমানদাকে দোলনায় বসিয়ে খুব মজা করছিল সবাই। বুড়ো বয়সেও কত আনন্দ করা যায়!
স্মৃতির পাতায় একটা গোটা সুন্দর দিনের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে ফিরলাম সেই বাসেই।
রাত আটটার মধ্যে পৌঁছে গেলাম বাড়িতে। প্রতিবছর এই ধরণের বনভোজন আয়োজন করার প্রতিশ্রুতি দেন সমিতির সম্পাদক বিমান ভট্টাচার্য।
-
কৃষ্ণনগরে 'হেরিটেজ ওয়াক'
স্থানীয় সংবাদ (০৭.০২.২৪) - সংবাদদাতা - মমতা বিশ্বাসঃ গত ২৩শে জানুয়ারী মহান নেতা সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিবস। কৃষ্ণনগর মহাবিদ্যালয় ও চাপড়া মহাবিদ্যালয়ের কিছু সংখ্যক ছাত্রী দিনটি উদ্যাপন করল কৃষ্ণনগর শহরের ঐতিহাসিক ও হেরিটেজ ভবনগুলি পরিক্রমার মধ্য দিয়ে। উদ্যোক্তা হলেন চাপড়া কলেজের ইতিহাসের শিক্ষক দীপাঞ্জন দে মহাশয়। তিনি গত বছর ২২শে জানুয়ারী দিলীপ কুমার রায়ের জন্মদিনে এই 'হেরিটেজ ওয়াক-এর সূচনা করেন। আমি ও আমাদের বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র উষান বিশ্বাস 'হেরিটেজ ওয়াক'-এর দ্বিতীয় বর্ষে যোগদান করি, সঙ্গে ছিলেন 'উড়িধান' পত্রিকার সম্পাদক ও নাট্য ব্যক্তিত্ব স্বপন বিশ্বাস।
মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র।
কৃষ্ণনগর হল নদিয়া জেলার জেলা শহর। প্রাচীন নাম রেইউ। এই গ্রামে অধিকাংশই গোপ সম্প্রদায়ের মানুষের বাস ছিল। ঘরে ঘরে কৃষ্ণ পুজো হতো, তাই পরবর্তীকালে কৃষ্ণনগর নামকরণ হয়। ঐতিহ্যমণ্ডিত প্রাচীন শহর। জমিদার রুদ্র রায় প্রতিষ্ঠিত রাজবাড়ি শহরের অন্যতম আকর্ষণ।
'হেরিটেজ ওয়াক'-এর স্থানগুলি হল -
ঘূর্ণীতে জনৈক শিল্পী মূর্তি গড়ার কাজে ব্যস্ত।
ঘূর্ণীঃ সমবেত সকলে সকাল ন’টায় টোটোগাড়ি করে প্রথমে আসি ঘূর্ণীর পুতুলপট্টিতে। কৃষ্ণনগর মাটির পুতুলের জন্য বিখ্যাত। হিউম্যান ফিগার বিশেষ বিশেষত্ব। ঘুরে দেখানো হল বিখ্যাত মৃৎশিল্পী তড়িৎ পাল ও প্রবীণ পাল মহাশয়ের শোরুম সহ আরও বেশ কয়েকটি। উৎকর্ষ শিল্প নিদর্শন বিস্ময় উদ্রেক করে। উল্টোদিকে আছে মহিলা পুলিশ পরিচালিত থানা।
কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুল।
পরের স্থানটি হল কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুল। বিদ্যালয়টি আসলে প্রথম ভারতীয় ব্যারিস্টার মনমোহন ঘোষের বসতবাড়ি। বাড়িটির গঠনশৈলী অসাধারণ। তিনি সরকারী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য বাড়িটি দান করেন। পরবর্তীকালে বিদ্যালয়টি সরকারী কলেজে রূপান্তরিত হয়। এই বিদ্যালয়ের বহু কৃতী ছাত্র দেশ ও দশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন, করে চলেছেন।
কৃষ্ণনগর সরকারী কলেজ।
কৃষ্ণনগর সরকারী কলেজ প্রাঙ্গণ।
কলেজ প্রাঙ্গণে রামতনু লাহিড়ীর আবক্ষ মূর্তি।
কৃষ্ণনগর সরকারী কলেজ ১৮৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বঙ্গে প্রতিষ্ঠিত তৃতীয় কলেজ। মদনমোহন তর্কালঙ্কার, রামতনু লাহিড়ী ও বহু বিদগ্ধ পণ্ডিত ব্যক্তিগণ এখানে শিক্ষাদান করেছেন। এই কলেজের বহু কৃতী ছাত্র-ছাত্রীগণ দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে রয়েছেন/ছিলেন।
কৃষ্ণনগর এ. ভি. হাইস্কুল।
কৃষ্ণনগর এ. ভি. হাইস্কুল। ১৮৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত। প্রতিষ্ঠাতা হলেন ব্রজনাথ মুখোপাধ্যায়। অমর শহীদ বাঘাযতীন এই বিদ্যালয় থেকে এন্ট্রান্স পাশ করেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন দ্বিজেন্দ্রলাল রায়। এভারেস্ট সহ আরও বেশ কয়েকটি পর্বতশৃঙ্গ জয়ী দেবাশিস বিশ্বাস এই বিদ্যালয়ের বিশিষ্ট প্রাক্তনী। বহু কৃতী ছাত্ররা দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে রয়েছেন। এবছর বিদ্যালয়ের ১৭৫তম বর্ষ উদ্যাপন হচ্ছে।
ব্রাহ্ম উপাসনালয়, আমিনবাজার।
এগিয়ে চলল টোটো। থামল আমিনবাজার 'ব্রাহ্ম উপাসনালয়'-এর সামনে। এটি এই অঞ্চলের প্রথম উপাসনালয়। স্বয়ং দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এই উপাসনালয় প্রতিষ্ঠার জন্য এক হাজার টাকা প্রদান করেন। প্রথম আচার্য হলেন ব্রজনাথ মুখোপাধ্যায়। ব্রাহ্মসভাটি 'হেরিটেজ ভবন' হিসেবে ঘোষিত হলেও কোনো সংস্কার হয়নি। বড্ড করুণ অবস্থা। প্রতিবছর মাঘী পূর্ণিমায় এখানে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির প্রধান ফটকের সামনে।
কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির অনেক কিছুই নষ্ট হয়ে গেছে। তবে নাটমন্দিরের কারুকার্য অসাধারণ। এক মাস ধরে রাজবাড়ির মাঠে বারোদোলের মেলা হয়। ধুমধামের সঙ্গে জগদ্ধাত্রী পুজো হয়। বারো জায়গা থেকে ঠাকুর আসে। থাকে তিনদিন। তিনদিনের তিন বেশ - রাজবেশ, ফুলবেশ, রাখালবেশ। মেলার অন্যতম আকর্ষণ সার্কাস।
কৃষ্ণনগর একাডেমি স্কুল।
কৃষ্ণনগর একাডেমি স্কুলঃ ডিরোজিও-র অন্যতম শিষ্য রামতনু লাহিড়ী মহাশয়ের বাড়ি এটি। তিনি কৃষ্ণনগর সরকারী কলেজে পড়িয়েছেন।
কৃষ্ণনগর এপ্রোচ রোডে রেললাইনের পাশে কৃষ্ণনগরের ভূমিপুত্র দ্বিজেন্দ্রলাল রায়-এর জন্মভিটে অবস্থিত। করুণ অবস্থা। তিনি সরকারী উচ্চপদের দায়িত্ব সামলেছেন এবং সেইসঙ্গে রচনা করেছেন গান, কবিতা ও মঞ্চসফল নাটক। পাকা রাস্তার অপর পাশে রয়েছে 'দ্বিজেন্দ্র পাঠাগার'। বাংলা সাহিত্যের আকর পাঠাগার।
গ্রেস কটেজঃ এটি 'হেরিটেজ বিল্ডিং' ঘোষিত হয়েছে। সংস্কার হয়েছে। নবরূপে সেজে উঠেছে। কাজী সাহেব প্রায় আড়াই বছর এখানে ছিলেন। বাড়িটি একজন ইহুদী রমনীর ছিল। নজরুল ইসলাম তাঁর বিখ্যাত কবিতা/গান 'কাণ্ডারী হুঁসিয়ার' এই বাড়িতে বসে লিখেছেন। প্রাণপ্রিয় পুত্র বুলবুলের জন্ম ও মুখেভাত এখানে হয়। তিনি প্রথম বাংলা গজল গানের সৃষ্টি করেন এই গ্রেস কটেজে বসেই। লিখেছিলেন 'মৃত্যুক্ষুধা' উপন্যাস। কৃষ্ণনগরে এই সময়ের মধ্যে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সমাবেশ হয়েছিল। তিনি সমাবেশগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। কাজী সাহেবের পদধূলিধন্য গ্রেস কটেজ। অন্য আবেগ, অন্য অনুভূতি।
রানীকুঠি।
রানীকুঠি, অর্থাৎ রানী জ্যোর্তির্ময়ীর কুঠি তাই রানীকুঠি। আসলে বাড়িটি ছিল বিখ্যাত চৌধুরী পরিবারের। যে পরিবারের সঙ্গে কলকাতার ঠাকুর পরিবারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল বৈবাহিক সূত্রে। এই পরিবারের সন্তান প্রমথ চৌধুরীর সঙ্গে বিয়ে হয় কবির প্রিয় ভাইঝি ইন্দিরাদেবীর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বেশ কয়েকবার এখানে এসেছেন এবং থেকেছেন।
কৃষ্ণনগর ক্যাথলিক চার্চ।
কৃষ্ণনগর ক্যাথলিক চার্চ অঞ্জনা নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল। প্রতিষ্ঠাতাগণ জাহাজে করে এখানে এসেছিলেন। অঞ্জনা এখন পানায় ঢাকা নালা। চার্চটি বিংশ শতকের প্রথম দশকে ভূমিকম্পে ধূলিসাৎ হয়ে যায়। তারপর আরও বৃহৎ আকারে চার্চ গড়ে ওঠে।
পরিক্রমা শেষে ছাত্রীগণ খুব খুশি। এটি তাদের জীবনে একটি বিশেষ দিন হয়ে রয়ে গেল। শিক্ষক দীপাঞ্জন দে জানান ভবিষ্যতে আরও বড়মাপের 'হেরিটেজ ওয়াক'-এর ব্যবস্থা করে বর্তমান প্রজন্মের ছাত্র-ছাত্রীদের কৃষ্ণনগরের ঐতিহ্য সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল করার প্রচেষ্টা জারি থাকবে।
-
কৃষ্ণনগর 'দ্বিজেন্দ্রলাল রায় কলেজ'-এ রক্তদান বিষয়ক মহতী অনুষ্ঠান
সংবাদদাতা - চৈতন্য দাসঃ গত ২২ জানুয়ারি ২০২৪ কৃষ্ণনগর 'দ্বিজেন্দ্রলাল রায় কলেজ'-এ ডক্টর স্নেহাশীষ রায় মহাশয়ের তত্ত্বাবধানে রক্তদান বিষয়ের ওপরে বিস্তারিত তথ্যনিষ্ঠ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
রক্তদানের খুঁটিনাটি বিষয়ে আলোকপাত করেন কলেজের প্রিন্সিপাল ডক্টর বাণীব্রত গোস্বামী, জনাব বাবর আলী শেখ, ডক্টর স্নেহাশীষ পাল প্রমুখ ব্যক্তিগণ।
আলোচনার মুখ্য বিষয় ছিল ক্যান্সার ও থ্যালাসেমিয়ার মতো মারণরোগ নির্মূলকরণ। প্রচুর ছাত্র-ছাত্রী, তাদের অভিভাবক ও সুধীজনের উপস্থিতিতে মনোজ্ঞ সদর্থক আলোচনা হয়। ফলশ্রুতিতে উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রীরা স্বতঃস্ফুর্তভাবে রক্তদানে এগিয়ে আসে। এদিন মোট ৫৪ জন রক্তদান করেন। প্রতিবছর রক্তদান শিবিরের মতো মহতী আয়োজন আরও বড়োমাপের করা হবে, এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেদিনের সর্বাঙ্গসুন্দর অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
-
বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা দিবস সাড়ম্বরে পালিত
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ২রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ব্রাহ্মণপাড়া 'চিন্তামণি ইনস্টিটিউশন'-এর ১০২তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষ্যে বিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে একজন প্রাক্তন ছাত্র এবং দাতা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রদীপকুমার চক্রবর্তী। অনুষ্ঠানে অনেক প্রাক্তন শিক্ষক, প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী, বহু শুভানুধ্যায়ী উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে বিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন করা হয়, শহিদবেদীতে মাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয় এবং বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সাতকড়ি কুণ্ডুর মর্মর মূর্তিতে মাল্যার্পণ করা হয়। স্বাগত বক্তৃতা দেন প্রধান শিক্ষক চিন্ময় কুমার মহাশয়।
এরপর ক্লাস পরীক্ষা এবং ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সফল ছাত্র এবং ছাত্রীদের পুরস্কৃত করা হয়। প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী তাঁর বাবার নামে ঘোষিত সর্বোত্তম ছাত্রকে দেয় 'নিত্যানন্দ চক্রবর্তী স্মৃতি রৌপ্যপদক' তুলে দেন শিলাজিৎ দে'র হাতে। এরপর নাচ, গান, আবৃত্তির মাধ্যমে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা।
বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষাকর্মী প্রয়াতা শিউলি দলুই-এর স্মৃতিতে তাঁর স্বামীর দান করা ৩ লাখ টাকায় একটি ৯০০ বর্গফুটের প্রশস্ত হল ঘর উদ্বোধন করেন ৮৮ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বিশ্বনাথ দলুই।
উপস্থিত শিক্ষক, ছাত্র, প্রাক্তন ছাত্র ও শিক্ষকেরা এদিনের অনুষ্ঠানের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। চিন্তামণি ইনস্টিটিউশনের প্রতিষ্ঠা দিবসকে সফল করতে যে সমস্ত মান্যগন্য ব্যক্তিরা সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন, তাঁদের সকলকে বিদ্যালয়ের তরফে ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
সম্প্রতি 'শান্তিপুর পূর্ণিমা মিলনী সংস্কৃতি মন্ত্রক', ভারত সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় তিনদিনের এক 'অভিনয় অভিনয় নাট্যমেলা'র আয়োজন করেছিলেন। এই অভিনব প্রাণের উৎসবের উদ্বোধনী প্রদীপ প্রজ্বলন করেন রাজ্য একাদেমীর সচিব শ্রীমতি হৈমন্তী চট্টোপাধ্যায়। উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় পৌরসভার সভাপতি সুব্রত ঘোষ, বাংলা সিনেমা-অভিনেত্রী ইশ্বিতা দাস এবং রাজ্যের বিভিন্ন নাট্যগোষ্ঠীর শিল্পীরা। উদ্বোধনী নৃত্যে ছিলেন 'ডোনা ড্যান্স একাডেমী'র ছাত্রীবৃন্দ। বর্তমান প্রজন্মের কাছে হারিয়ে যাওয়া সেই পুতুল নাচ 'কলকাতার ডানা'-র পরিবেশনায় ফিরে এল মঞ্চে।
এরপর তিন দিনে বহিরাগত ৯টি দল ৯টি নাটক পরিবেশন করেন। ভীষণ মজার সাবলীল উপস্থাপনা সাইন-কলকাতার 'ক্রশ কানেক্সন' নাটক। প্রতিটি নাটকই অভিনয় নৈপুণ্যে একদম সেরা প্রযোজনা। হাসি-কান্না-কষ্ট-দুঃখ সবই পাওয়া গেল অভিনয়ে। নাট্যিকের 'দেবীগর্জন' এক সফল প্রযোজনা। পারমিকের 'ফাঁস', সিঞ্চন কৃষ্ণনগরের 'দূরবীন' যথেষ্ট মুন্সিয়ানার পরিচয় রাখে। প্রতিটি দলের আবহ ও পোষাক প্রশংসনীয়। উন্মিলনের 'গদাই-এর বিয়ে', আনন্দনের 'সিকিউরিটি' অভিনয় গুণে দর্শকের মন জয় করে। শান্তিপুর পূর্ণিমা মিলনীর নিজস্ব প্রযোজনায় নাটিকা 'মন্ত্রবিভ্রাট', 'মূকাভিনয়', 'সতীদাহ' এবং 'পার্ক' অনবদ্য।
রূপায়ণ চৌধুরী একজন সফল শিল্পী ও সংগঠক। সদ্য প্রয়াত 'ওস্তাদ রশিদ খাঁ' মুক্তমঞ্চে পরিবেশিত হয় মালদহের ও ঝাড়গ্রামের নিজস্ব সংস্কৃতি গম্ভীরা ও ছৌ নৃত্য আঙ্গিকে পরবা ডান্স। এক নতুন লোক-সংস্কৃতির আঙ্গিকে দর্শকরা এই নতুন দুটি নৃত্য দেখেন এবং তারিফ করেন। সংস্থা মঞ্চকে মাঝে রেখে চারিদিকে বিভিন্ন পরিষেবামূলক স্টল সাজিয়ে উৎসবকে নান্দনিক করে তোলেন। সংস্থার সভ্যদের হাতের কাজ যথেষ্ট প্রশংসনীয়। শান্তিপুর পূর্ণিমা মিলনী সর্বদাই নতুন চিন্তাভাবনার নির্দশন রাখেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এই সুসজ্জিত মেলা ও নাট্য উৎসবকে সুচারুরূপে সংযোজনা এবং পরিচালনা করেন সম্পাদক রূপায়ণ চৌধুরী। দর্শক সমাগম ছিল আশানুরূপ। এত বড় মাপের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সুচারুভাবে পরিচালনার মাধ্যমে 'শান্তিপুর পূর্ণিমা মিলনী'র সাফল্যের মুকুটে আরেকটি পালক সংযোজিত হল, অনায়াসে এ কথা বলা যায়।