স্থানীয় খবর
-
'জি' ব্লকের সার্বজনীন দুর্গাপূজা
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ২০২৪ সালের 'জি' ব্লকের দুর্গাপূজা উপলক্ষে আয়োজিত খুঁটিপুজোয় যে ধরনের জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল, এক অর্থে তা ছিল ব্যাপক। তখনই বোঝা গিয়েছিল এবারের থিম পুজো 'পদ্মালয়ে পরমেশ্বরী' শুধু করুণাময়ীতে নয়, সল্টলেকের বুকে একটা ধামাকা আনতে চলেছে। আঙ্গিক যেমন ছিল নজরকাড়া, তেমনই প্রতিমা, সঙ্গে ছিল চতুর্থী থেকে নবমী পর্যন্ত দুরন্ত সব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
প্রতিদিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছিল পরিশীলিত ও উচ্চমানের। বিশেষ করে ষষ্ঠী ও সপ্তমী দিনের অনুষ্ঠান ছিল এককথায় অনবদ্য। বৈদিক স্তোত্রপাঠের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়, সূচনা করেন ডঃ মানস রায়। এরপর একক নৃত্য পরিবেশন করে শ্লীজা হালদার, রিদ্ধিমা সাহা, সাগ্নিকা মিদ্যা ও রায়া আদিত্য। 'রাঙামাটিতে মায়ের বোধন' শীর্ষক এই অনুষ্ঠানটিতে ছিল মোট ১০টি গান। অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা হলেন অনুসোমা দাস, ডঃ অরুনিমা দে, অর্চনা বিশ্বাস, সম্পিতা মিশ্র, শিউলি আদিত্য, স্বাতী ব্যানার্জি, গৌরী প্রতিহার, লাইজু কবীর, ডঃ অনিরুণা দে, রুদ্রদেব সান্যাল, সুতীর্থ ভট্টাচার্য ও অংশুমান ভট্টাচার্য। যন্ত্রসংগীতে ছিলেন মেলোডিয়ান্স গ্রুপ। 'কাহন' ও 'বিধাননগর বৈতানিক'-এর যুগ্ম পরিবেশনায় নিবেদিত এই অনুষ্ঠানের পরিচালনায় ছিলেন অনুসোমা দাস ও সঞ্চালনায় ডাঃ সুবীর বসু।
মহাসপ্তমীর সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন অনন্যা গাঙ্গুলী। এরপর 'রিদম' গোষ্ঠী এক অসাধারণ ক্লাসিক্যাল ড্যান্স পরিবেশন করে। অংশগ্রহণে ছিল অদ্রিজা, অহনা, অঙ্কিতা, তানিশী, সুকন্যা, অর্পিতা ও শ্রীজয়ী। আরও দুটি সমবেত নৃত্যে ছিল শ্লীজা, ঋদ্ধিমা, আদিত্রী, আদৃতি, তৃষা ও জেসমিন। ইন্দিরা বন্দোপাধ্যায়ের 'আনন্দম' গোষ্ঠী নিবেদন করে 'আগমনীর সুরে'। অংশগ্রহণে ছিলেন রীতা বসু, নীলিমা চ্যাটার্জি, সুদীপ্তা দোলুই ও স্বর্ণালী ব্যানার্জি। এই অনুষ্ঠানটি সকলের মন ছুঁয়ে যায়। শর্মিষ্ঠা গনাই-এর আধুনিক গান 'এ শুধু গানের দিন' শ্রোতাদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে। এছাড়া ছিল সুবীর বসু ও চন্দনা বসুর দ্বৈত আবৃত্তি। শ্রুতি নাটক 'মাতৃরূপেণ সংস্থিতা', পরিবেশনায় ময়ূরী সাহা ও গোপা সাহা। এ দিনের মূল আকর্ষণ ছিল অনুসোমা দাস পরিচালিত 'রিদম'-এর 'প্রকৃতি ও পঞ্চভূত'।
প্রকৃতির পাঁচটি উপাদান - বায়ু, আগুন, জল, মাটি এবং আকাশ - জীবনের এক অনবদ্য সুর সৃষ্টি করে, যা আমাদের নিরাপত্তা এবং সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। বায়ু আমাদের শ্বাসের শক্তি দেয়, আগুন আমাদের উষ্ণতা এবং আলোয় পূর্ণ করে, জল আমাদের শরীরকে পুষ্ট করে, মাটি আমাদের পায়ের নিচের ভিত্তি এবং আকাশ আমাদের চারপাশে বিস্তৃত এক বিশালতায় বেঁধে রাখে। এই উপাদানগুলো যখন স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে, তখন তারা প্রকৃতির এক অপূর্ব সুরে আবদ্ধ হয়ে আমাদের পৃথিবীকে একটি বাসযোগ্য স্থানে রূপান্তরিত করে। কিন্তু যখন আমরা এই পবিত্র ভারসাম্যকে বিনষ্ট করি - বায়ুকে দূষিত করি, জলে বিষ মেশাই, মাটিকে আঘাত করি - তখন প্রকৃতির এই সমন্বিত সুরে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। যে বায়ু একসময় আমাদের জীবন দিয়েছে, তা তখন শ্বাসরুদ্ধকর হয়ে ওঠে; আগুন উগ্র হয়ে ওঠে এবং নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়; জল বিষাক্ত হয়ে যায়, জীবজগতকে বিপন্নতার মুখে ফেলে এবং মাটি ভেঙে যায়, ফসল উৎপাদনের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এই বিশৃঙ্খলা কেবল পরিবেশকেই নয়, আমাদেরও ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়, কারণ আমাদের জীবনধারাও প্রকৃতির এই ভারসাম্যের ওপর নির্ভরশীল।
প্রকৃতির এই সুস্থ ভারসাম্যকে রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য, কারণ এই ভারসাম্যই আমাদের অস্তিত্বের ভিত্তি। প্রকৃতিকে সংরক্ষণ করার মাধ্যমে আমরা নিজেদেরও সুরক্ষিত রাখি। আমরা যদি প্রকৃতির এই উপাদানগুলোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই এবং তাদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে চলি, তাহলে প্রকৃতি আমাদের প্রতিদানে শান্তি এবং সমৃদ্ধির আশ্রয় দিয়ে যাবে। মূলত এই দৃষ্টিকোণের ওপর দাঁড়িয়ে ছিল 'প্রকৃতি ও পঞ্চভূত'। এতে অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা হলেন রায়া আদিত্য, অহনা মুখার্জি, শ্রীজয়ী চৌধুরী, অদ্রিজা মিশ্র, অঙ্কিতা ঘোষ, তানিশী সুর, সুকন্যা ব্যানার্জি, অর্পিতা গোস্বামী, ইভান ঘোষ, সাগ্নিকা মিদ্যা, তৃষা দাস ও জেসমিন।
নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন আবরার শাকিব, রূপসজ্জায় 'মিরর ফেয়ার', বেশভূষা ও সাজসজ্জায় অনুসোমা দাস। সঞ্চালনায় ছিলেন অনুসোমা দাস ও সুবীর বসু।