স্থানীয় খবর

  • 'সংস্কৃতিক অঙ্গন'-এর অনুষ্ঠান

সংবাদদাতা - সমীরণ ভৌমিকঃ বিগত ৩রা মে, ২০২৫ (শনিবার) পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ডেবরা ব্লকের 'রাধামোহনপুর সাংস্কৃতিক অঙ্গন'-এর পরিচালনায় 'Dr. Norman Bethune Memorial Trust' এবং মেচেদা 'পপুলার নার্সিংহোম'-এর সহযোগিতায় রাধামোহনপুর পান মার্কেটে একটি ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প-এর আয়োজন করা হয়েছিল। উক্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবিরে জেনারেল ফিজিশিয়ান, দন্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন। স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবিরে বিনামূল্যে ইসিজি, ব্লাড প্রেসার ও ব্লাড সুগার টেস্ট করা হয়েছিল। উক্ত মেডিকেল ক্যাম্পে প্রায় ১২৫ জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়।

আবার গত ১৮ই মে, ২০২৫ (রবিবার) 'রাধামোহনপুর সাংস্কৃতিক অঙ্গন'-এর পরিচালনায় সকাল ৮টা থেকে শুরু হয় যোগাসন, অঙ্কন, আবৃত্তি এবং নৃত্য প্রতিযোগিতা। এলাকার বহু কচিকাঁচা ছেলে-মেয়ে এবং অন্যান্য ছাত্রছাত্রীরা এতে অংশগ্রহণ করে। উক্ত দিনই সন্ধ্যা ৬টায় সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠান 'রাধামোহনপুর সাংস্কৃতিক অঙ্গন' মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় রবীন্দ্র-নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপন। মঞ্চে সকালের প্রতিযোগীদের মধ্যে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানাধিকারীদের পুরস্কার বিতরণ করা হয় এবং এলাকার চলতি বছরের মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সর্বোচ্চ স্থানাধিকারীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। পুরস্কার বিতরণ করেন 'রাধামোহনপুর সাংস্কৃতিক অঙ্গন'-এর প্রাণপুরুষ, প্রাক্তন রসায়নের শিক্ষক মাননীয় চিত্তরঞ্জন দাস। উপস্থিত ছিলেন সম্পাদক নির্মল মন্ডল, সভাপতি প্রণব ঘোষ ও প্রাক্তন শিক্ষক এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অন্যতম সদস্য দুলাল চন্দ্র চক্রবর্তী।

পুরস্কার বিতরণীর পর শুরু হয় এলাকার কচিকাঁচা ও গুণী শিল্পীদের সহযোগিতায় রবীন্দ্রসংগীত, রবীন্দ্র-নৃত্য, নজরুলগীতি, নজরুল-নৃত্য, আবৃত্তি ও গিটার বাদ্যের মাধ্যমে রবীন্দ্র-নজরুল বন্দনা করা হয়। এছাড়াও বিশেষ আকর্ষণ ছিল বালিচক 'স্নেহের পরশ নৃত্য একাডেমি'র কর্ণধার রুবি রায়ের পরিচালনায় এবং পরিকল্পনায় একটি মনোজ্ঞ রবীন্দ্র-নজরুল নৃত্যানুষ্ঠান।

প্রচুর মানুষের উপস্থিতিতে ও মনোজ্ঞ পরিবেশনে এদিনের অনুষ্ঠান সর্বাঙ্গসুন্দর হয়।


  • পদযাত্রা

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ 'শান্তিপুর পূর্ণিমা মিলনী'র উদ্যোগে সোমবার ১২ই মে, ২০২৫, বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন বিকেল ৪টায় ডাকঘর নেতাজী মোড় থেকে সর্বস্তরের নাগরিকদের অংশগ্রহণে শুরু হয় এক সুশৃঙ্খল পদযাত্রা।

ভারতীয় সেনাবাহিনী ও অখন্ড ভারতবর্ষের স্বপক্ষে জনমত গ্রহনের লক্ষ্যে এই মহতী পদযাত্রার আয়োজন। সারা পৃথিবী জুড়ে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে, সন্ত্রাসবাদমুক্ত পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশে ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসবাদী হামলার নিরসনে শুভবুদ্ধিসপন্ন মানুষদের একত্রিত করার জন্য আয়োজন করা হয় সুবিশাল পদযাত্রার। যে সমস্ত সেনা জওয়ানরা পরিবার থেকে সহস্র মাইল দূরে থেকে হিমালয়ের কোলে -৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সীমান্ত পাহারা দিয়ে, প্রয়োজনে জীবন বলিদান দিয়ে দেশবাসীকে সর্বদা বিপদমুক্ত রাখছে, শান্তিতে রাখছে তাদের মহান আত্মত্যাগের স্মরণে সমাজের সর্বস্তরের দেশপ্রেমিক মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে সার্থক হয় এই ঐতিহাসিক পদযাত্রা।

সাম্প্রতিক কালে ভূস্বর্গ কাশ্মীরের পহেলগাঁও-এ পর্যটকদের ওপর সন্ত্রাসবাদীদের জঘন্য, পাশবিক, নির্মম, নৃশংস হত্যাকাণ্ডে দেশবাসী আজ হতবাক ও শোকস্তব্ধ।

শান্তিপুর পূর্ণিমা মিলনীর উদ্যোগে শান্তিপুরবাসী সংগঠিতভাবে তাদের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে দেশমাতৃকার উদ্দেশ্যে নিবেদিত ১২ই মে'র প্রতিবাদী পদযাত্রায়। একই সঙ্গে মনে রেখেছে অতন্দ্র প্রহরী হয়ে মাতৃভূমিকে জীবন দিয়ে রক্ষা করছে যারা সেই বীর সেনানীদের।


  • 'সুজন বাসর'-এর রবীন্দ্র স্মরণ

সংবাদদাতা - ইনাস উদ্দীনঃ গ্রেস কটেজে 'সুজন বাসর'-এর রবীন্দ্র স্মরণ অনুষ্ঠান।

কৃষ্ণনগর গ্রেস কটেজে অন্যান্য বারের মতো এবারেও সম্পূর্ণ ঘরোয়া পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল 'সুজন বাসর'-এর রবীন্দ্র স্মরণ (১১ মে, রবিবার)। এদিনের অনুষ্ঠানের একটি বিশেষ অভিমুখ ছিল 'বাউল রবীন্দ্রনাথ' নিয়ে বিশদ আলোচনা। সূচনা কথায় সম্পাদক ইনাস উদ্দীন উল্লেখ করেন - বাংলার প্রকৃতি বাউলের প্রকৃতি। সেই প্রকৃতিকে কলমে ধারণ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ১৮৯১ সালে পারিবারিক জমিদারি পরিদর্শনে প্রথমবার শিলাইদহে যান। পাশেই ছিল লালন ফকিরের আস্তানা। শতায়ু পার করে তিনি তখনও জীবিত। সেখানকার মাঠঘাটে ভেসে বেড়ায় বাউলের গান। পোস্ট অফিসের ডাকপিয়ন গগন হরকরার কন্ঠে শোনেন 'আমি কোথায় পাব তারে'। মুগ্ধ কবি সেই সুরে রচনা করলেন সেই কালজয়ী সঙ্গীত - 'আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি'। মুখ্যত তিনিই লালন ফকির সহ বিভিন্ন বাউল শিল্পীর গানকে কলকাতার সুধী সমাজে তুলে আনেন।

রবীন্দ্র প্রতিকৃতিতে মাল্য অর্পণ করেন সভাপতি দীপঙ্কর দাস। এছাড়াও মালা পরিয়ে শ্রদ্ধা জানান কবি পরেশচন্দ্র রায়। নজরুল মূর্তিতে এদিন মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন মলয় কুমার বিশ্বাস। নজরুল প্রতিকৃতিতে মালা পরান কাজল ভাদুড়ি এবং রতন কুমার নাথ। এদিনের বিশেষ উল্লেখ্য অনুষ্ঠান ছিল চারটি গান সম্বলিত কোরাসে 'বাউল রবীন্দ্রনাথ' শীর্ষক একটি ছোটো গীতি আলেখ্য। গানগুলি ছিল 'ভেঙে মোর ঘরের চাবি', 'প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে', 'মন যখন জাগলি না রে' এবং 'আজ ধানের ক্ষেতে রৌদ্রছায়ায়'। দীপঙ্কর দাসের নেতৃত্বে গানে অংশগ্রহণ করেন প্রীতিকণা জোয়ারদার, বীথিকা মল্লিক, ইনাস উদ্দীন ও স্বপ্না মজুমদার। ভাষ্যপাঠে সুকৃতি ঘোষ। প্রারম্ভিক সঞ্চালনায় ছিলেন কবি অমৃতাভ দে। তিনি রবীন্দ্রনাথের স্মরণে স্বরচিত কবিতা পড়ে শোনান। কবিতা পাঠ করেন কাজল ভাদুড়ি, পরেশচন্দ্র রায়, সাধক দাস প্রমুখ। এছাড়া রবীন্দ্র কবিতা আবৃত্তি করেন সুকৃতি ঘোষ। বিভিন্ন বাউল অঙ্গের রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন তাপস কুমার মোদক, ডা. সমরজিত দাস, প্রীতিকণা জোয়ারদার, শঙ্খশুভ্র সরকার, বীথিকা মল্লিক, চুমকি বিশ্বাস এবং জয়দেব মণ্ডল। তবলায় সঙ্গত করেন প্রেমানন্দ বসাক।

এদিনের নির্ধারিত আলোচনা ছিল 'নজরুল সাহিত্যে রবীন্দ্র সঙ্গীতের ব্যবহার'। আলোচক রতন কুমার নাথ। তিনি খুব সহজ এবং সাবলীল ভাষায় উদাহরণ সহযোগে তুলে ধরেন নজরুলের রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রতি গভীর ভালোবাসা, চর্চার কথা। করাচীর সেনা পল্টনে অন্যান্য খাতাপত্রের সাথে নজরুলের সাথী ছিল রবীন্দ্র গানের স্বরলিপি। স্নেহের অধিকারে গল্পে, উপন্যাসে এবং গানেও রবীন্দ্রসঙ্গীতের বিপুল ব্যবহার, কোথাও কোথাও তা ছিল দুঃসাহসী ব্যবহার। হুবহু সুরে গান রচনা করে বাজারে ছেড়ে দিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ অকৃত্রিম, প্রায় অন্ধ স্নেহশীলতায় নজরুলের এসব আবদার এবং আচরণকে সানন্দে প্রশ্রয় দিয়ে গিয়েছেন। পারস্পরিক এই উচ্চ হৃদয়ের উদারতার কারণে ত্রিশের দশক জুড়ে এক আকাশে দুই সূর্য দিব্য বিরাজমান ছিল, কোথাও কোনো জটিলতার সৃষ্টি হয়নি।

ঘরোয়া পরিবেশেই সমবেত 'পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে' - বাউল ভাবের এই গান দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপন হয়। অনুষ্ঠানে পৌরোহিত্য করেন সভাপতি দীপঙ্কর দাস।


  • শ্রদ্ধায় স্মরণে জাদুশিল্পী

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিনে জাদুকর শ্যামল কুমার।

চলচ্চিত্র জগতের কিংবদন্তি সত্যজিৎ রায়ের ১০৪তম জন্মদিনে গত ২রা মে তাঁর বাসভবনে গিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জাদুশিল্পী শ্যামল কুমার।

এই উপলক্ষে তিনি বলেন, 'গুপি বাঘা ফিরে এলো' (১৯৯২) ছবিতে তাঁর ম্যাজিক পরিবেশনা যখন সত্যজিৎ রায়ের প্রশংসা পেল, তখন যেন তাঁর সফল জাদুকর হওয়ার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন সত্যি হয়েছিল।

সেই মুহূর্ত আজও তাঁর হৃদয়ে অমলিন। সত্যজিতের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ, তাঁর উপস্থিতি, তাঁর দৃষ্টি - সবটাই আজও শ্যামল কুমারের জীবনের প্রেরণা। সত্যজিতের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারা অত্যন্ত গর্বের বিষয়।

সত্যজিৎ রায় (জন্মঃ ২ মে ১৯২১ - প্রয়াণঃ ২৩ এপ্রিল ১৯৯২) ছিলেন একজন ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার, শিল্প নির্দেশক, সংগীত পরিচালক এবং লেখক। তাঁকে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের একজন হিসেবে গণ্য করা হয়। সত্যজিৎ রায়ের জন্ম কলকাতা শহরে সাহিত্য ও শিল্প সমাজের খ্যাতনামা রায় পরিবারে।আজ তাঁর জন্মদিনে জাদুকর শ্যামল কুমার মাথা নত করে স্মরণ করেন সেই যুগস্রষ্টাকে।


'গুপী বাঘা ফিরে এলো' (১৯৯২) ছবির পোস্টার।


  • রক্তদান উৎসব

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের পুণ্য প্রভাতে কিংবদন্তি শিল্পী ও প্রখ্যাত সুরস্রষ্টা সলিল চৌধুরীর জন্মশতবর্ষ স্মরণে ১লা মে, বৃহস্পতিবার, 'সল্টলেক রেনেসাঁ'র উদ্যোগে আয়োজিত হলো রক্তদান উৎসব, ২০২৫।

প্রতি বছরের মতো এবছরও ১লা মে, ২০২৫ গ্রীষ্মকালীন রক্ত সংকট মেটাতে সল্টলেক রেনেসাঁ আয়োজন করে এক বিরাট রক্তদান উৎসব ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের করুণাময়ী খেলার মাঠে। পাশাপাশি চলে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও রক্ত পরীক্ষা। এইবার ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল ব্লাড ব্যাঙ্কের সহযোগিতায় শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বাসে এই রক্তদান উৎসব হয়। স্বাস্থ্য ও রক্ত পরীক্ষা করে প্রতি বছরের মতো ক্যালকাটা হার্ট ক্লিনিক অ্যান্ড হসপিটাল। সলিল চৌধুরীর জন্মশতবর্ষকে সামনে রেখে এবারের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল 'সল্টলেক রেনেসাঁ'। নিউটাউন পদক্ষেপ, প্যাসন, আনন্দম, সংলাপ, হাতেখড়ি কবিতার ক্লাস সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন তপন ধর ও দেবশ্রী মুখার্জি। ইভানার গান আর অহনার নৃত্যপ্রদর্শন এই উৎসবে আলাদা মাত্রা এনে দেয়।

রোজাকালীন রক্তদান করার জন্য সম্বর্ধনা দেওয়া হয় সদ্রুল ইসলামকে। সম্বর্ধনা দেওয়া হয় 'করুণাময়ী সমন্বয় সমিতি'র চেয়ারম্যান সুদীপ ধরকে তাঁর দায়িত্ববোধ, পরিশ্রম, প্রগতিশীল চিন্তা ও অসীম জীবনীশক্তি যা আগামী প্রজন্মকে দেবে অনুপ্রেরণা। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ৩টে পর্যন্ত সমগ্র অনুষ্ঠানটি চলে।

'সল্টলেক রেনেসাঁ'র সম্পাদক রামানুজ চ্যাটার্জি জানান, "এবারের রক্তদাতাদের সংখ্যা প্রায় নব্বই-এর কাছাকাছি। ব্লাড ব্যাঙ্কে প্রচুর মানুষ অপেক্ষায় আছে কখন এই রক্ত গিয়ে ব্লাড ব্যাঙ্কে পৌঁছবে আর তারা সংগ্রহ করতে পারবে।" তাই উনি রক্তদাতাদের আন্তরিক অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, "আগামী বছর আরও অনেক মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। যতো বেশি রক্ত দিতে মানুষ এগিয়ে আসবে, তত বেশি মানুষ উপকৃত হবেন।" বিশেষ করে সদ্য আঠারো টপকানো যুব সমাজকে আরও বেশি করে এগিয়ে আসতে অনুরোধ করেন রেনেসাঁ-র সম্পাদক রামানুজ চ্যাটার্জি।


  • আলপনায় বাংলা বর্ষবরণ ১৪৩২

সংবাদদাতা - অমৃতাভ দেঃ 'কৃষ্ণনগর চারুকলা সোসাইটি'র উদ্যোগে আলপনায় 'বাংলা বর্ষবরণ ১৪৩২ এবং বিশ্ব শিল্পকলা দিবস ২০২৫' উদযাপন এ বছর সপ্তম বর্ষে পদার্পন করে। দীর্ঘদিন ধরে যারা 'চারুকলা সোসাইটি'র কার্যকলাপ নজরে রাখেন তারা জানেন কৃষ্ণনগর শহরের বিভিন্ন রুচিশীল মানুষজন, তাদের পরিবার, ক্ষুদে সন্তান সবার বাংলা বছরের শেষ দিন বিকেল থেকে হাতে তুলি নিয়ে যে নান্দনিক কার্যকলাপে মেতে ওঠেন তা পূর্ণতা পায় নতুন বছরের নতুন সূর্যের প্রথম কিরণে। সময় স্বল্পতার কারণে এই বছর উদ্যোক্তারা এই চারুকর্ম শুরু করেছিলেন শনিবার রাত থেকে যা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে একদিন পিছিয়ে নববর্ষের দিন রাতজাগা পর্ব দিয়ে (মোট চারদিন) সমাপ্ত হয়েছে। এবার শহরের বিভিন্ন প্রান্তের নির্দিষ্ট কিছু এলাকা যা মূল শহরের সাথে শহরের বাইরের মানুষজনের সাথে সংযোগ ঘটায় এমন স্থানে আলপনা দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়েছিল এবং উদ্যোক্তা ও এলাকাবাসীর মতে তা সম্পূর্ণ সফল হয়েছিল।

চার বছরের শিশুশিল্পী থেকে চৌষট্টি বছরের তরুণ বৃদ্ধ শিল্পী পর্যন্ত সবাই কৃষ্ণনগর শহরের রাস্তায় আলপনা এঁকে শহরকে নান্দনিক করে তুলেছেন। এই পর্বের কর্মকান্ডের সাথে সহযোগিতা করেছে ক্লাব 'আগুনেশ্বরী'র সদস্যগণ এবং বিশ্ববিখ্যাত কৃষ্ণনগরের মাটির পুতুল সৃষ্টিকারী মৃৎশিল্পী সমিতির বিখ্যাত শিল্পীগণ এবং ওঁনাদের সহযোগী তরুণ শিল্পীগণ। এর সাথে বিশেষ সংযোজন, 'কৃষ্ণনগর চারুকলা সোসাইটি' কোনো ধরণের রাজনৈতিক দল অথবা কর্পোরেটেড সংস্থার কাছ থেকে সাহায্য সংগ্রহ করে না। আলপনার মূল পর্বটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল পুতুলপট্টি সংলগ্ন এলাকায়। সাথে সংযুক্ত হয়েছিল ১২ নং জাতীয় সড়কে তারা মা হোটেল সংলগ্ন আইল্যান্ড এবং কৃষ্ণনগর স্টেশনের চার নং প্ল্যাটফর্ম ও স্টেশনের সন্মুখে।

প্রসঙ্গত জানাই এখানে সচেতনভাবে আলপনার মূল চরিত্র রাখবার চেষ্টা করা হয়, রঙ্গোলী বা অন্য কোনো প্রকার শিল্পরীতির সাথে এর দূরতম সম্পর্ক নেই। সেই কারণে শুরু থেকে ঐতিহ্যগত সাদা রঙকেই ব্যবহার করা হয়। এই শিল্পরীতি বা আলপনার মূল উৎস প্রকৃতি। মহান শিল্পী নন্দলাল বসু, গৌরী ভঞ্জ, ননীগোপাল ঘোষ হয়ে অধুনা সুধীরঞ্জন মুখোপাধ্যায় এর আলপনার নির্যাস নিয়ে এই আলপনা শিল্প নির্মাণ করা হয়। খেয়াল করলে দেখতে পারবেন, উদ্যোক্তারা প্রতিবছর নতুন নতুন আলপনা দর্শকদের উপহার দেবার চেষ্টা করে থাকেন, কারণ বছরভর এই নিয়ে চর্চা হয়ে থাকে। সংগঠকদের বিশ্বাস আগামী বছরগুলিতেও এখনকার মতো রুচিশীল দর্শক তাদের সাথে থাকবেন। প্রার্থনা ছিল, "ভালো থাকুন, চারুমুখী থাকুন, কৃষ্ণনগর শহর নান্দনিকভাবে সেজে উঠুক শুভ নববর্ষ ১৪৩২-এ"।