স্থানীয় খবর
-
পরিবেশ-বান্ধব সৌরবিদ্যুৎ প্লান্টের শুভ উদ্বোধন
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ১৬ই আগস্ট, বুধবার, দুপুর ১টায় ভগবতী দেবী বালিকা বিদ্যালয়ে মাননীয় দমকল ও জরুরী পরিষেবা মন্ত্রী সুজিত বোসের শুভ করকমলে পরিবেশ বান্ধব অপ্রচলিত সৌরশক্তি প্লান্টের উদ্বোধন ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে মূল অনুষ্ঠানের শুভসূচনা হয়।
নির্দিষ্ট অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত ভাষণ দেন প্রধান শিক্ষিকা প্রতিভা পোদ্দার। এরপর বিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী নৃত্যের মাধ্যমে সূর্য বন্দনা করে। উপস্থিত অতিথিবৃন্দের সম্বর্ধনার পরে মাননীয় মন্ত্রী তার বক্তব্যে বিদ্যালয়ের পাঠাগারের জন্য বিধায়ক তহবিল থেকে দুই কিস্তিতে মোট ৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। এছাড়া ক্যারম বোর্ড, টেবিল টেনিস বোর্ড পাঠিয়ে দেওয়ার ও বাস্কেট বল কোর্ট করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। পরিচালন সমিতির সভাপতি ডঃ মৈত্রী ঘোষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এরপর উপস্থিত অতিথিরা যথাক্রমে শ্যামা দাস, সুদীপ ধর ও সুপ্রিয় চক্রবর্তী বক্তব্য রাখেন।
পরের পর্বে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শুরুতে আমি কন্যাশ্রী গানের সঙ্গে ছাত্রীদের নৃত্য ও শেষে 'আমি কন্যাশ্রী' নাটিকা। সংলাপ ও পরিচালনায় বিবি সেনগুপ্ত। অভিনয়ে অংশগ্রহণ করে দেবাস্মিতা মাইতি, পিয়ালী হালদার, সোনালী মাঝি, রিশা ভট্টাচার্য, নিকিতা গিরি ও রিয়া প্রামানিক। মনোমুগ্ধকর এই নাটক জীবন সংগ্রামের এক মহৎ চিত্রকল্প, বিশেষকরে যারা অর্থনৈতিক ও শিক্ষাগত দিক থেকে পিছিয়ে পড়া পরিবার থেকে উঠে আসছে তাদের কঠিন লড়াইয়ের একটা খন্ডচিত্র। আমাদের সমাজ এই অধ্যায়ের মধ্যে দিয়ে ক্রমশ এগিয়ে চলেছে। আমরা স্বপ্ন দেখি, বারবার দেখি, 'একদিন আমরা বিজয় অর্জন করব এবং যোগ্যতার নিরীখে পৃথিবীর উন্নত দেশের সঙ্গে একসারিতে বসব।'
পরিশেষে এটা বলতে বাধা নেই, উপস্থিত ছাত্রীরা, তাদের অভিভাবকরা ও অতিথিরা একটা বলিষ্ঠ সামাজিক মেসেজ নিয়েই ফিরে গেছে।
-
১৫ ও ১৬ আগস্ট দু'দিন ব্যাপী বিধাননগর কাউন্সিলর কাপ প্রতিযোগিতা
বিশেষ সংবাদদাতা - সুশোভন মুখার্জিঃ ৩৪ নং ওয়ার্ডের পৌরপিতা ও পাঁচ নং বোরোর চেয়ারম্যান রঞ্জন পোদ্দারের উদ্যোগে ৭৭ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দু'দিন ব্যাপী বিধাননগর কাউন্সিলর কাপ ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। প্রথমে বিশিষ্ট অতিথি আইএফএ'র চেয়ারম্যান সুব্রত দত্ত ও এআইএফএফ'র সহসভাপতি সুদেষ্ণা মুখার্জিকে উত্তরীয়, মিমেন্টো ও চারা গাছ দিয়ে সম্বর্ধিত করা হয়। এরপর সুব্রত দত্ত জাতীয় পতাকা ও রঞ্জন পোদ্দার পুর পতাকা উত্তোলন করেন। প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় দিনে আইএফএ'র সম্পাদক অনির্বাণ দত্তকে সম্বর্ধনার মাধ্যমে স্বাগত জানানো হয়। সন্ধ্যে ৭টায় আসেন মাননীয় দমকল ও জরুরী পরিষেবা মন্ত্রী সুজিত বোস। আতসবাজি জ্বালিয়ে তাঁকে সম্বর্ধনা দেওয়া হয়। এরপর ইষ্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান ক্লাবের প্রাক্তন খেলোয়াড়রা প্রীতি ম্যাচে অংশগ্রহণ করেন। মন্ত্রী তাদের সঙ্গে পরিচিত হন। প্রীতি ম্যাচে ইষ্টবেঙ্গল মোহনবাগানকে ২-০ গোলে পরাজিত করে। মন্ত্রী ছাড়াও যে সমস্ত জনপ্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন, তারা হলেন তুলসী সিনহা রায়, অনিতা মন্ডল, রত্না ভৌমিক, মিনু দাস চক্রবর্তী।
দ্বিতীয় দিনে খেলা শুরুর আগে মাঠে ব্যান্ডে গান বাজানো হয়, ঢাকের আওয়াজে মাঠ সরগরম হয়ে ওঠে। তারপর মাঠজুড়ে চীয়ার গার্লসদের ছন্দবদ্ধ নৃত্য প্রর্দশনী। এরপর শুরু হয় চোখ ধাঁধানো লেজার শো ও আতস বাজার ঝলকানি। মাঠ জুড়ে দর্শকদের শুধুই উচ্ছ্বাস।
নকআউট বেসিসে প্রতিযোগী ১৬ টিমের মধ্যে ফাইনালে ওঠে বরানগর স্পোর্টিং ক্লাব ও নবোদয় সংঘ। ফাইনালে নবোদয় সংঘ ১-০ গোলে বরানগর স্পোর্টিং ক্লাবকে পরাজিত করে। বিজয়ী দল ট্রফি, মেডেল ছাড়াও ১ লক্ষ টাকা ক্যাস প্রাইজ পায়, বিজিত দল পায় ৬০ হাজার টাকা। পুরস্কার বিতরণ করেন ৩৪ নং ওয়ার্ডের পৌরপিতা ও পাঁচ নং বোরোর চেয়ারম্যান রঞ্জন পোদ্দার। দু'দিন ব্যাপী এই ফুটবল প্রতিযোগিতার সমাপ্তি হতে রাত ১টা বেজে যায়। উপস্থিত জনপ্রতিনিধিরা ও দর্শকবৃন্দ এতো উচ্চমানের ফুটবল প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য রঞ্জন পোদ্দারের ভূয়সী প্রশংসা করে।
-
শ্রীঅরবিন্দ পুরস্কার, ২০২৩ (বাংলা বিভাগ)
সংবাদদাতা - সুদীপ ধরঃ করুণাময়ী সমন্বয় সমিতির প্রবীণ আজীবন সদস্য গোবিন্দ লাল চক্রবর্তী তাঁর রচিত বই 'চরণরেখা ধরে' শ্রীঅরবিন্দ পুরস্কার, ২০২৩ সম্মানে ভূষিত হয়।
১৫ আগস্ট, মঙ্গলবার স্বাধীনতা দিবসের পুণ্য লগ্নে শ্রীঅরবিন্দ সমিতি, শ্রীঅরবিন্দ ভবন, ৮ শেক্সপীয়র সরণী, কোলকাতা -৭০০০৭১ এক মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানে মাননীয় রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের হাত দিয়ে গোবিন্দ লাল চক্রবর্তীকে শংসাপত্র ও মিমেন্টো প্রদান করে।
গোবিন্দ লাল চক্রবর্তী মাত্র ১৭ বছর বয়সে শ্রীমায়ের কোলে মাথা রেখে তাঁর স্নেহস্পর্শ পেয়েছিলেন। তারপর থেকে শ্রীঅরবিন্দ ও শ্রীমায়ের অনুগত ভক্ত হয়ে সারাজীবন তাঁদের কর্মকাণ্ড ও বাণী প্রচার করে যান। বর্তমানে বয়স ৮৫ বছর, এখনো শ্রীমায়ের প্রেরণায় নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন।
১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তান থেকে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে হাবরায় এসে সেখানকার উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ওঁনার নিকট আত্মীয় হাবরা নিবাসী শান্তি চক্রবর্তীর সান্নিধ্যে এসে শ্রীমায়ের প্রতি আকৃষ্ট হন। শান্তি চক্রবর্তীর উদ্যোগে শ্রীমায়ের শুভ আবির্ভাব তিথিতে ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৫ "হাবরা শ্রীঅরবিন্দ কর্মী সংঘে"র পত্তন হয়। প্রথম থেকেই এই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকেন। ওই সময়ে পন্ডিচেরী আশ্রম সম্পাদক নলিনী কান্ত গুপ্তকে চিঠি লেখেন, উত্তরে বসন্তের এক বিকেলে একটি প্যাকেট আসে, সেখানে ছিল কয়েকটি বাংলা বই, শ্রীমায়ের আশীর্বাণী ও নলিনী গুপ্তের চিঠি। শান্তি চক্রবর্তীর উৎসাহে ১৯৫৬ সালে আগস্ট দর্শনে তাঁর পন্ডিচেরী আশ্রম যাওয়া। নলিনী কান্ত গুপ্তের সক্রিয় সহযোগিতায় ১৫ আগস্ট সেই শুভদিন, শ্রীমায়ের কোলে মাথা রেখে দু'চরণ ছুঁয়ে অপার্থিব কৃপা লাভ করা। ১৯৬৪ সালে শ্রীঅরবিন্দ আশ্রম মাতৃমন্দিরের প্রতিষ্ঠা, শ্রীমা ও শ্রীঅরবিন্দ সংক্রান্ত পুস্তকাদির প্রকাশনা। বিগত ৩৭ বছর লেখালেখি, প্রকাশনা এবং শ্রীঅরবিন্দ চিন্তাভাবনা প্রসারে অনলসভাবে কাজ করে চলেছেন। শুধু হাবরা নয়, সল্টলেকের অরবিন্দ স্কুল ও কোলকাতার অরবিন্দ সোসাইটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত আছেন।
করুণাময়ী সমন্বয় সমিতি তার প্রবীণ সদস্য গোবিন্দ লাল চক্রবর্তীর সাফল্যের জন্য গর্ব অনুভব করে, তাঁর সুস্থ দীর্ঘজীবন কামনা করে ও প্রার্থনা করে তাঁর সাফল্যের মুকুটে নিত্যনতুন পালক সংযোজিত হোক।
-
৩২ নং ওয়ার্ডে স্বাধীনতা দিবস পালন
১৫ আগস্ট, মঙ্গলবার, সকাল ১০টায় ৩২ নং ওয়ার্ডের পৌরমাতা কাকলি সাহার উদ্যোগে প্রচুর মানুষের উপস্থিতিতে সাড়ম্বরে ৭৬তম স্বাধীনতা বার্ষিকী পালন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন পৌরমাতা কাকলি সাহা। জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পরে, তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করেন। অনেকে বক্তব্য রাখেন ও স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অবদানের কথা বার বার স্মরণ করেন। সবশেষে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। এখানেও উপস্থিত অধিবাসীদের জন্য জলযোগের ব্যবস্থা থাকে।
৩২ নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন স্থানে পতাকা উত্তোলনে পৌরমাতা কাকলি সাহা।
-
দিকে দিকে স্বাধীনতা দিবস পালন
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ১৫ আগস্ট, মঙ্গলবার স্বাধীনতা দিবসের পুণ্য প্রভাতে দিকে দিকে মহা সমারোহে ভারতীয় গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের ৭৭তম স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়।
সকাল ৯-৩০ মিনিটে 'জি' পরিচালন সমিতির উদ্যোগে পরিচালন সমিতির প্রাঙ্গনে নবনির্মিত শ্বেতশুভ্র বেদিতে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ছবি স্থাপন করে মাল্যদান করা হয়। প্রথমে পরিচালন সমিতির সহ-সম্পাদক ভাস্কর সেন বক্তব্য রাখেন। এরপর পরিচালন সমিতির সভাপতি সুবীর বসু জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ও স্বাধীনতা সংগ্রামের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন। সেই সঙ্গে জানান স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বলিদানের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা আমরা অর্জন করেছি তার মহৎ উদ্দেশ্য পরিপূরণে এখনো অনেক পথ চলা বাকি। পরিশেষে জাতীয় সংগীত গেয়ে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘোষণা করা হয় ও তার সাথে উপস্থিত আবাসিকবৃন্দের জন্য মিষ্টিমুখের ব্যবস্থা রাখা হয়।
-
সল্টলেক রেনেসাঁ ক্লাবের অভিনব উদ্যোগ
সংবাদদাতা - সুশোভন মুখার্জিঃ সল্টলেক করুণাময়ীর জনপ্রিয় রেনেসাঁ ক্লাবের অভিনব উদ্যোগ পথশিশুদের ইলিশ মাছ ভাতে খুশি করা। যারা সারা বছর দু'বেলা দু'মুঠো ভাত খেতে পায় না। তাদের কাছে মাছ, বিশেষ করে ইলিশ মাছের মতো মহার্ঘ মাছ দিয়ে পেট পুজো করা শুধু অসম্ভব নয়, স্বপ্নাতীত। সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন, রেনেসাঁ ক্লাবের সদস্যরা ও তাদের পুরোধা রামানুজ চ্যাটার্জি।
এই অঞ্চলের বিশিষ্ট মানুষেরা এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত থাকে এবং পথশিশুদের কথা এইভাবে ভাবার জন্য উদ্যোক্তাদের ভূয়সী প্রশংসা করে।
রেনেসাঁ ক্লাব সারা বছর ধরে পুজো থেকে শুরু করে নানা রকম সামাজিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত থাকে। করুণাময়ী সমন্বয় সমিতির চেয়ারম্যান সুদীপ ধর এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি এই অভিনব প্রচেষ্টার জন্য অকুণ্ঠ সাধুবাদ জানান ও রেনেসাঁ ক্লাবের উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি কামনা করেন।
-
'জি' ব্লকে বাইশে শ্রাবণ উদযাপন
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ২২ শ্রাবণ, ইং ৮ আগস্ট, মঙ্গলবার উৎসাহ, উদ্দীপনার সঙ্গে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবস 'জি' ব্লকে ভাবগম্ভীর পরিবেশে পালিত হয়।
প্রথমে পরিচালন সমিতির সভাপতি সুবীর বসু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্ণাবয়ব মূর্তিতে মাল্যদান করে অনুষ্ঠানের শুভসূচনা করা হয়। উপস্থিত ছিলেন 'জি' ব্লকের পরিচালন সমিতির সদস্য, আবাসিক বৃন্দ ও বিশিষ্ট জনেরা। রবীন্দ্র স্মৃতিচারণ শেষে জাতীয় সংগীত গেয়ে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
-
'অশোকনাথ গৌরীনাথ শাস্ত্রী স্মারক সমিতি'র উদ্যোগে কবিপ্রণাম
সংবাদদাতা - ভারতী পালঃ ২৮শে জুলাই, শুক্রবার, সন্ধ্যায় রথীন্দ্রনাথ সভাঘরে অনুষ্ঠিত হয় 'কবি রজনীকান্ত সেন স্মরণ'। কী এক অমোঘ আকর্ষণে এই সভাঘরে বার বার ছুটে যাই, তেমনি আজও গিয়েছিলাম। সেখানে গাইলাম, "তুমি নির্মল কর, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে..."।
কবির গানেই কবিকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানালাম। সম্পাদক বিমান ভট্টাচার্য প্রথমে আলোচনার সূত্রপাত করেন, সঞ্চালন করেন সহ-সভাপতি তিমির রঞ্জন হালদার। প্রধান বক্তা ছিলেন অধ্যাপক অমলেন্দু হাইত। তাঁর অপূর্ব প্রতিবেদনে উপস্থিত সকলেই সমৃদ্ধ হলেন, জানালেন অনেক অজানা তথ্য।
রজনীকান্ত সেন ছিলেন মুখ্যতঃ কবি, তিনি আড়াইশোর ওপর গান রচনা করেছিলেন। দেশ যখন পরাধীনতার শৃঙ্খলে বন্দী, তখন তাঁর রচিত "মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নে রে ভাই" - এই গান দেশবাসীকে স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করেছিল। ওঁনার লেখা কবিতা 'স্বাধীনতার সুখ' পড়েছি, পড়িয়েছি। কী অদ্ভুত স্বাধীনতার তাৎপর্য! ছোট্ট বয়সে পড়েছি, 'পাকা হোক তবু ভাই পরের ও বাসা, নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর খাসা', এই পংক্তিগুলো স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার তাৎপর্য অনুধাবন করতে শিখিয়েছিল। তাঁর প্রতিটি গান বা কবিতা রচনার প্রেক্ষাপট এতো সাবলীলভাবে বর্ণনা করলেন অধ্যাপক অমলেন্দু হাইত, মোহিত হয়ে গেলাম।
অনেক কবি বা সাহিত্যিকের জীবনের শেষভাগের মতো এই কবিরও জীবনের পথ কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। ছিল বিয়োগব্যাথায় ভরপুর। হয়তো এই সমস্ত বিয়োগব্যথাই কবির রচনাকে এতো হৃদ্য ও ঋদ্ধ করে তুলেছে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ যখন ওঁর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন, তিনি লিখলেন, "আমি অকৃতি অধম বলেও তো তুমি, কম করে কিছু দাওনি..." কী অনবদ্য আকুতি! তাঁর প্রতিটি গানের ছত্রে ছত্রে ঈশ্বরের চরণে সমর্পণের ইঙ্গিত সুস্পষ্ট। যেমন - "কবে তৃষিত এই মরু ছাড়িয়া যাইব, তোমার রসালো নন্দনে..." কিংবা, "আমি দেখি নাই কিছু, বুঝি নাই কিছু, দাও হে দেখায়ে, বুঝায়ে"। কী আশ্চর্য অভিব্যক্তি! প্রণতি আর নিবেদনের আকুল প্রয়াস!
এছাড়া যাঁরা বক্তব্য রাখেন, তারা হলেন কৃষ্ণপদ ভট্টাচার্য, তিমির রঞ্জন হালদার, প্রিয়জিত ভৌমিক, তাপস মান্না, মানস ভট্টাচার্য ও বিপাশা বসু। কবিতা পাঠ করেন সুনীতি বিকাশ চৌধুরী, দেবাশীষ চট্টোপাধ্যায়, বলাইচাঁদ চট্টোপাধ্যায়, দেবিকা ঘোষ, অনুরাধা হালদার। সঙ্গীত পরিবেশন করেন কৃষ্ণকুমার পাল, ধ্রুব হালদার, জয়ন্ত চক্রবর্তী, উৎপল দত্ত, গোপাল দাস, শম্পা রায়, সন্ধ্যা হালদার, ভারতী পাল, চিন্ময়ী বিশ্বাস ও চন্দ্রানী কর্মকার। তবলায় সজল রায়। এই বিভাগের সঞ্চালনায় থাকেন চন্দ্রানী কর্মকার।
উপস্থিত সকল দর্শক, শ্রোতৃবর্গ এই অনুষ্ঠানের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন ও সম্পাদক বিমান ভট্টাচার্যকে এমন উচ্চমানের অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য অকুণ্ঠ সাধুবাদ জানান।
-
:: স্মরণ
অপরাজিতা চক্রবর্তী
জন্মঃ ২৭ জুলাই, ১৯৭৬
অকালপ্রয়াণঃ ২০ জুলাই, ১৯৯১
সুদীপ কুমার ধর
ডঃ দিলীপ কুমার চক্রবর্তী ও শেফালি চক্রবর্তীর ছোট মেয়ে গোপা শুধু বাড়ির লোকের চোখের মণি ছিল না, প্রতিবেশীদেরও চোখের মণি ছিল। ভারি মিষ্টি, প্রানচঞ্চল মেয়েটিকে ভালো না বেসে থাকা যেত না। এমনই ছিল তার স্বভাব।
লেখাপড়ায় যেমন ভালো, খেলাধূলায় ততোধিক ভালো। গোপার কোনো প্রতিযোগিতায় নামা মানে একটা প্রাইজ বাঁধা। তেমনি আঁকা প্রতিযোগিতায় অংশ নিলে অথবা আবৃত্তি প্রতিযোগিতায়, প্রথম পুরস্কার ওর জন্য অপেক্ষা করে থাকত। এহেন গুণাবলীর মেয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার সময় থেকে কবিতা লেখা শুরু। প্রাঞ্জল কবিতাগুলির মধ্যে পরিশীলিত জীবনবোধের পরিচয় আছে।আর আছে কাব্য দেবতার প্রতি জীবনের অন্তিম আর্তি।সেটা হবে নাই বা কেন, তার বাবা যে প্রতিষ্ঠিত কবি আর মা ও নিয়মিত কবিতা লেখেন। উভয়েরই অনেকগুলি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে।
পাড়ার দুর্গা পূজা মানে গোপার প্রাণবন্ত উজ্জ্বল উপস্থিতি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অবিরত ঘর আর পূজামন্ডপ করে বেড়াত। এছাড়া প্রতিটি পর্যায়ের দুর্গা পূজার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নাচ, গান, অভিনয়ের মাধ্যমে তার প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে আসত। বহুমুখী প্রতিভার এই মিষ্টি মেয়েটি অতি অল্প বয়স থেকেই সকলের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছিল।
সর্বগুণে গুণান্বিতা গোপা, যার পোশাকি নাম অপরাজিতা চক্রবর্তী অষ্টম শ্রেণীতে পড়াকালীন মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে, বিধাতার কি লীলা কে জানে, বাঁচার ইচ্ছে তার একেবারে চলে গিয়েছিল, জীবনযুদ্ধে ওই একবারই অপরাজিতা পরাজিত হয়েছিল। তার কবি মন কবিতার ছত্রে ছত্রে নিপুণভাবে জীবন যন্ত্রনার ছবি এঁকেছে।
"যে সংসারকে ভালোবেসেছিল,
আর পাঁচজনের মতো বাঁচতে চেয়েছিল সংসারে সুখে।
তাকে কেউ বাঁচতে দিল না,
একটা আধ-ফুটন্ত কলিকে কেউ ফুটতে দিল না
সে অকালে পড়ল ঝরে!"
"সব কিছু বলে যাবো তোমাকে রাতের অন্ধকারে।
ফোঁটা ফোঁটা চোখের জলে ভিজে যায় পাতা,
এই দুঃখের একমাত্র সাক্ষী তুমি
আমার প্রাণের থেকেও প্রিয়
তুমি আমার কাব্য-দেবতা।"
"হে পৃথিবী, তুমি আমায় দিয়েছ জন্ম,
করেছ লালন আপন সন্তানের মতো,
দিয়েছ মাথা উঁচু করে চলবার সন্মান,
পায়ের তলায় মাটি।
আর আমার কিছুই পাওয়ার নেই,
সব আকাঙ্ক্ষাই তো হয়েছে পূর্ণ,
সত্যি, আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞ।
সময় আমার আসেনি
কিন্তু তবুও আমায় ছাড়তে হবে ধরিত্রী,
মায়া মমতার বন্ধন, কত পিছুটান
সব কাটিয়ে চলে যেতে হবে আমায়
অকালে!"
পরিশেষে বলি,
"হয়নি তোমার যাবার সময়
তবু তুমি গেলে
আমাদের ফেলে
সঙ্গে নিলে সবার হৃদয়।"
তোমার প্রিয়-পরিজনদের অন্তিম প্রার্থনা, "অপরাজিতা, তুমি যেখানেই থাক, ভালো থাকো, আনন্দে থাকো, চিরশান্তিতে বিরাজিত থাকো।"
ছবিতে বাঁদিক থেকে অপরাজিতা, ওর দিদি নিবেদিতা, বাবা ও মা। ১৯৮৬ সালে তাজমহলের সামনে তোলা।
'অপরাজিতার কবিতা' বইয়ের প্রচ্ছদ।